বাংলাদেশের পাখিবৈচিত্র

বাংলাদেশের মত ছোট্ট একটি দেশে এপর্যন্ত প্রায় ৭২০+ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে, এটা একটা প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার না ? ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ ভারতীয় ও ইন্দো মালয়ী হটস্পটের মাঝামাঝি অবস্থিত হওয়ায় এমনটি সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে পাখির মুল প্রতিবেশ হচ্ছে দেশের বনভূমিসমূহ। দেশের সিলেট ও চট্রগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনাঞ্চলে, সুন্দরবনে মূলত বনের পাখিদের প্রধান অংশ পাওয়া যায়, এসব বন সাধারনত মিশ্র চিরসবুজ প্রকৃতির। এছাড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের ছড়ানো ছিটানো মিশ্র পত্রঝরা বনে ও সারাদেশের গ্রামীন বনাঞ্চলে প্রচুর শাখাচারী পাখির দেখা মেলে। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বুলবুল, হরবোলা, পাতা ফুটকি, চুটকি, মৌটুসী, ফুলঝুরি ইত্যাদি পাখিরা।

শিমুল ফুলে খাবার খুজছে বাতাবী কাঠঠোকরা

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এবং এসব নদীর ভাটিতে প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়, ফলে এদেশে নদীগুলোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভাবেই প্রচুর বিল, হাওড়, বাওড় ও জলাশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব জলাশয়ে আমরা দেশের সিংহভাগ জলচর পাখিদের দেখে থাকি। এছাড়া উপকূলে সাগর ও নদীর মোহনায় চরাঞ্চলেও জলচর পাখিদের হটস্পট সৃষ্টি হয়েছে। এসব পাখিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজহাঁস, হাঁস, মানিকজোড়, গুড়গুড়ি, ঝিল্লি, বাটান, চ্যাগা, টিটি, গাংচিল, পানচিল ইত্যাদি পাখিরা।

বাটান, জৌরালী ও চাপাখির ঝাঁক

আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ পাখির প্রতিবেশ হচ্ছে ঘাসবন। ঘাসবনের সাথে নদী/খাল এর সম্পর্ক রয়েছে বেশ। বহমান পানির সাথে প্রচুর পলি/বেলেমাটি/বালুর চর সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে ও উপকূল এলাকায়। এসব যায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির ও আকৃতির ঘাস জন্মে। এসবের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য প্রতিবেশ এবং তাতে বাস করে দেশের পাখি বৈচিত্রের এক বড় অংশ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাখিরা হল তুলিকা, ভরত, চটক, নলফুটকি ও ঝাড়ফুটকি, প্রিনা, ফিদ্দা ইত্যাদি পাখিরা।

ঘাসবনে ভোমরা ছোটন

এছাড়াও আমাদের দেশের সকল প্রতিবেশ এর পাখিদেরকে শিকার করে খায় এমন একদল পাখি রয়েছে যাদের আমরা বলি শিকারী পাখি। এরা বিভিন্ন প্রতিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে আর সেসব পরিবেশে বিভিন্ন প্রাণী-পাখিকে শিকার করে খায়।

আমাদের দেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর এর গভীরে কিছু সাগরের পাখি পাওয়া যায় যারা স্থলভাগে খুব কমই আসে। এরাও আমাদের দেশের পাখি বৈচিত্রের অংশ।

আমাদের দেশে এরকম বিভিন্ন প্রতিবেশে এপর্যন্ত পাওয়া যাওয়া সকল পাখিকেই আমাদের দেশের পাখির তালিকায় স্থান দেয়া হয়েছে। বেশ কটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে আবার প্রতিবছর নতুন নতুন পাখি আমাদের দেশের তালিকায় যুক্তও হচ্ছে। বাংলাদেশে পাখিচর্চা করেন মূলত প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা, সাথে পাখিকে ভালোবেসে অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রচুর মানুষ পাখি দেখা ও ছবি তোলাকে শখ/নেশা হিসেবে গ্রহণ করে এদেশে পাখি গবেষনায়, হিসেব রাখায় ও পাখি সংরক্ষণে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন।

এই পৃথিবী ও পরিবেশ রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই আসুন আমরা পাখি দেখি, তাদের ভালোবাসি এবং তাদের সংরক্ষণে যে যার স্থান থেকে চেষ্টা করি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top