বাংলাদেশের যত ফিঙে

1. Black Drongo (Dicrurus macrocercus) ফিঙেঃ বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যাওয়া সুলভ এই আবাসিক ফিঙ্গেটি খুব সুন্দর। মাঠেঘাটে মানুষের ফসলের পোকা মাকড় খেয়ে এই পাখিটি প্রকৃতি ও কৃষকের খুব উপকার করে। সারাদেশে এদের সংখ্যা সন্তোষজনক, বাসাবাড়ির আশেপাশেই পাওয়া যায়। প্রজননকালে এরা বেশ আক্রমনাত্বক, এছাড়া স্বাভাবিক সময়েও এরা শিকারী পাখি ও অন্যান্য পাখিদের সবসময় চাপের উপর রাখে, এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয় বা খাবারে ভাগ বসায়, চাই সে পাখিটি যত বড়ই হোক পরোয়া নেই। এজন্য এর আরেক নাম ফিঙ্গেরাজা। এর ঠোটের গোড়ায় সাদা একটি বিন্দু থাকে।

2. Ashy Drongo (Dicrurus leucophaeus) মেটে ফিঙেঃ পরিযায়ী এই ফিঙেটিকেও সারাদেশে উচু গাছবিশিষ্ট এলাকায় গাছের আগায় বসে ও একটু পরপর উড়ে উড়ে পোকা ধরতে দেখা যায় শীতকালে। দেহের রঙ ছাইরঙা, লেজে নিখুতভাবে চেরা রয়েছে এবং চোখের রঙ টকটকে লাল। গানের গলা বেশ। এর ছবি প্রথম তুলেছিলাম ঢাকার অদূরে সাভার থেকে।

3. White-bellied Drongo (Dicrurus caerulescens) সাদা-পেট ফিঙেঃ বাংলাদেশের এই পরিযায়ী ফিঙ্গেটিকে প্রথম দেখা গিয়েছিলো রাজশাহীর শিমলা পার্কে ২০১৯ সালে। প্রায় একই সময়ে একে দিনাজপুর এর সিংড়া জাতীয় উদ্যানেও পাওয়া যায়। একে দেশেীই দুইবারই দেখা গেছে। পেটের কাছটা ধবধবে সাদা বলে এর এমন নাম।

4. Crow‑billed Drongo (Dicrurus annectans) কাক-ঠুটি ফিঙেঃ এই প্রজাতির ফিঙ্গেটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরল। এর বুক ও তলার কাছটায় সাদা সাদা ছিটে দাগ থাকে এবং এর ঠোট বেশ মোটা ও কাকের মত, এজন্য এর এমন নাম। একে সাধারনত চট্বগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলে মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। সম্প্রতি বান্দরবনে দেখা গিয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্রোঞ্জ ফিঙে বা কালো ফিঙের সাথে একে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। এখনো এর দেখা পাইনি।

5. Bronzed Drongo (Dicrurus aeneus) ব্রোঞ্জ ফিঙেঃ ছোট আকারের এই আবাসিক ফিঙ্গেটিকে প্রায় সারাদেশেই দেখা যায়। এদের গায়ের রঙ চকচকে নিলাভ কালো, গলার কাছটায় ও মাথায় চকচকে কিছ উপালক রয়েছে যাতে আলো পড়লে খুব সুন্দর দেখায়, লেজে স্পষ্ট চেরা রয়েছে। এর ছবি প্রথম তুলেছিলাম যশোর থেকে।

6. Lesser Racket-tailed Drongo (Dicrurus remifer) ছোট র‍্যাকেট ফিঙে/ছোট ভীমরাজঃ এই প্রজাতির ফিঙ্গেটি বাংলাদেশের শীতকালীন পরিযায়ী তবে এরা খুব লম্বা পথ পরিযায়ন করে না। শীতে পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতলে নেমে আসে সম্ভবত। তখন একে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রামীন বনাঞ্চল ও উদ্যানে দেখা যায়। এছাড়া দেশের সকল বনেই এর দেখা মেলে। মাথার উপরের পালক উপরের ঠোটের আগার দিকে চলে আসে, লেজের আগা চৌকোনা। এর লেজে প্রজনন কালে ও বছরের বড় অংশে লম্বা দুটি পালক থাকে যা আকারে বেশ লম্বা। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম গারো পাহাড় থেকে।

7. Hair-crested Drongo (Dicrurus hottentottus) কেশরী ফিঙেঃ পরিযায়ী এই ফিঙ্গেটিকে শীতে প্রায় সারাদেশেই বড় গাছপালা বিশিষ্ট স্থানে দেখা যায়। অন্য পাখির ডাক নকল করতে পারে। এর গলা-বুকের কাছটা মখমলের মত কালো পালকে ঢাকা, মাথার উপরে কিছু সুতোর মত চিকন পালক রয়েছে যা দেখে কেশরের মত লাগে, এজন্য এর এমন নাম। এছাড়া এর লেজের পালকের আগা পেছনের দিকে ভাজ হয়ে থাকে। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার মিরপুরে।

8. Greater Racket-tailed Drongo (Dicrurus paradiseus) বড় ভীমরাজঃ দেশের দুরকম ভীমরাজের মধ্যে এটি বড় আকৃতির। আমাদের দেশের সকল বনাঞ্চলে এর দেখা পাওয়া যায়, বেশি দেখা যায় সুন্দরবনে, সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের বনগুলোতে। এছাড়া সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মানুষের আবাসস্থলের আশেপাশে একে দেখা যায়, এছাড়া রাজশাহীতে সম্প্রতি দেখা গেছে নদীর ধারে এক রোপন করা বনে। একে প্রথমবার দেখেছিলাম রাঙামাটির সাজেক ভ্যালিতে, ছবি তুলি সাতছড়ি থেকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top