বাংলাদেশের বুনো তিতির, মোরগ ও কোয়েল

আমাদের দেশে এই পরিবারের মোট ১৩ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে।

লাল-গলা বাতাই

Rufous-throated Partridge

Arborophila rufogularis
আবাসিক পাখি

ছোট আকৃতির মুরগিজাতীয় এই পাখিটি আমাদের দেশের সিলেট অঞ্চলের পাহাড়ি বনে পাওয়া যেত। প্রায় তিন দশক আগে শিকার করা অবস্থায় কয়েকটি পাখি দেখা গিয়েছিল। এর গলার কাছটায় লালচে রঙের পালক থাকে। চট্বগ্রামের উচু পাহাড়ি বন থেকে সম্প্রতি বছরগুলোতে একবার ডাক শোনা যাবার দাবী আছে।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
বহুদিন দেশে পাওয়া যায়না

সাদা-গাল বাতাই

White-cheeked Partridge

Arborophila atrogularis
আবাসিক পাখি

এই প্রজাতির বাতাই পাখিটিকে আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের প্রায় সকল পাহাড়ি বনে পাওয়া যায়। সাধারনত বনের মধ্যের বাঁশবাগান এলাকা এদের পছন্দ, উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করে। দিনের বেলায় মাটিতে খুটে খুটে খায় আর রাতে কোন গাছের ডালে উঠে বিশ্রাম নেয়। এর দেখা পাইনি এখনো তবে চট্বগ্রামের এক বনে খুব কাছ থেকে ডাক শুনেছিলাম।

বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
দেখা পাইনি এখনো
পাখিটির ডাক শুনুন
Play
Pause

দেশী ময়ূর

Indian Peafowl

Pavo cristatus
দেশ থেকে বিলুপ্ত পাখি

আমাদের দেশে অর্ধশতাব্দি আগেও সুন্দরবন বাদে প্রায় সকল বনে এই ময়ুরের দেখা পাওয়া যেত, এমনকি খোলা উন্মুক্ত প্রান্তরেও। তবে অত্যধিক শিকার করার ফলে প্রায় তিন দশক আগে বাংলাদেশ থেকে ময়ুর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে এখনো পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম সহ উত্তর বঙ্গের সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যে সীমান্তের ওপার থেকে খাবার, বিশেষ করে ভুট্টা খাবার জন্য, মানুষের হাতে ধরাও পড়ে। সম্প্রতি এমন কয়েকটি ময়ুরকে দেখা গেছে ও ছবি তোলা হয়েছে পঞ্চগড়ের এক সীমান্তবর্তী এলাকায়।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে বিলুপ্ত/খুব কম দেখা মেলে
দেশে এখন আর পাওয়া যায়না

সবুজ ময়ূর

Green Peafowl

Pavo muticus

বাংলাদেশের চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনে পাওয়া যেত এই প্রজাতির ময়ুর, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে এর দেখা পাওয়া যায়নি।

বিশ্বে বিপন্ন
এদেশে বিলুপ্ত
দেশ থেকে বিলুপ্ত

মথুরা

Kalij Pheasant

Lophura leucomelanos
আবাসিক পাখি

কালো রঙ এর অত্যন্ত সুন্দর এই বনমুরগি আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের প্রায় সকল বনেই পাওয়া যায়। শেরপুরের গারো পাহাড়ে খুব কম সংখ্যায় হলেও আছে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম চট্বগ্রামের এক বনের ধারের চা-বাগান থেকে।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
মথুরা, চট্বগ্রাম

মেটে কাঠ-ময়ূর

Grey Peacock-Pheasant

Polyplectron bicalcaratum
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি

মথুরার চেয়ে বেশ কিছুটা বড় আকৃতির অনিন্দ্য সুন্দর এই পাখিটিকে আমাদের দেশের চট্বগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। সিলেট বিভাগের কয়েকটি বনে এর উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে। খুব লাজুক স্বভাবের এই পাখিটি মানুষকে খুব স্বযত্নে এড়িয়ে চলে, কারন বন্যপ্রানী শিকারীদের টার্গেট এ। বেশ কাছ থেকে ডাক শুনতে পেলেও চট্বগ্রামের এক বনে গিয়ে এর দেখা পাইনি এখনো।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এখনো দেখা পাইনি।
পাখিটির ডাক শুনুন
Play
Pause
Play
Pause

বনমোরগ

Red Junglefowl

Gallus gallus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি

আমাদের গৃহপালিত মুরগী এর পূর্বপুরুষ এবং দেখতেও কাছাকাছি এই পাখিটিকে আমাদের দেশের সুন্দরবন সহ সকল ধরণের বনে পাওয়া যায়। চোরাশিকারীদের শিকারের অন্যতম টার্গেট এই পাখিটি ফলে এর সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। মোরগগুলো দেখতে খুব সুন্দর হয়, গৃহপালিত মোরগের চেয়ে দেখতে বেশ কিছুটা আলাদা, ডাক চিকন। ভোরে ও সন্ধ্যায় বনের মধ্যে ফাকা যায়গায় বেরিয়ে এসে চরে বেড়ায় আর দিনের বেলা সাধারনত ঝোপঝাড়ের মধ্যে বা গাছের ডালে উঠে বসে থাকে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম চট্বগ্রাম এর এক চা বাগান থেকে। বনাঞ্চল এলাকায় ভোরবেলা এর ডাক শুনে এক আশ্চর্য সুন্দর অনুভূতি হয়।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
বনমোরগ, হবিগঞ্জ
পাখিটির ডাক শুনুন
Play
Pause

বাদা তিতির

Swamp Francolin

Francolinus gularis

আমাদের দেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর উজানে চরাঞ্চলে একে এখনো পাওয়া গেলেও যেতে পারে।

বিশ্বে সংকটাপন্ন
এদেশে আর দেখা মেলে না
দেশে আর পাওয়া যায়না

মেটে তিতির

Grey Francolin

Ortygornis pondicerianus
আমাদের দেশের বিরল আবাসিক পাখি

বাংলাদেশ থেকে একসময় বিলুপ্ত হয়ে গেছে ধারনা করা হলেও দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সীমান্তবর্তী কিছু স্থানে এখনো এর দেখা পাওয়া যায়। আমি এর ছবি প্রথম তুলেছিলাম রাজশাহী থেকে। এছাড়া কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাঙ্গাতেও এদের দেখা গেছে। সাধারনত বেশ কয়েকটি একসাথে থাকে। জোরে জোরে ডাকাডাকি করে এবং মানুষ এদের কাছাকাছি চলে গেলে খুব দ্রুত উড়ে পালিয়ে যায়।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
মেটে তিতির, পদ্মার চর
পাখিটির ডাক শুনুন
Play
Pause

কালা তিতির

Black Francolin

Francolinus francolinus
আমাদের দেশের অতি বিরল আবাসিক পাখি

এর প্রচলিত নাম হচ্ছে শেখ ফরীদ বাঁ পান-বিড়ি-সিগারেট। এর তীক্ষ্ণ উচ্চস্বরের ডাক শুনে মনে হতে পারে এই শব্দগুলোই বলছে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধুপুর বনে এর দেখা পাওয়া গেছিলো সর্বশেষ। পরবর্তীতে কয়েক বছর আগে পঞ্চগড় জেলায় সিমান্তবর্তী কিছু স্থানে এর নিয়মিত পদচারনার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে দুদেশের মধ্যে এরা বিচরন করে, বিপদ টের পেলেই পালিয়ে ভারতে চলে যায়। এছাড়া চাপাইনবাবগঞ্জের দুর্গম এলাকায় সীমান্ত ঘেষা একটি স্থানে এদের দেখা মেলে এদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে। এর দেখা এখনো পাইনি।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এখনো দেখা পাইনি

রাজ বটেরা

Blue-breasted/King Quail

Synoicus chinensis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী পাখি

এই প্রজাতির কোয়েল বাঁ বটেরা আমাদের দেশে পরিযায়ী। তবে খুব দুর্লভ, মানুষের হাতুর তালুর কয়েকভাগের একভাগ এর দেহের আকার। পুরুষ পাখিগুলো দেখতে খুব সুন্দর, বুকের কাছটা গাড় নীল, পেটের দিকে গাড় খয়েরী আর গলায় সাদা পালকের মালা রয়েছে কয়েকটি। আমাদের দেশে পদ্মার অববাহিকায় কদাচিৎ, বরিশালে, মৌলভিবাজার ও শেরপুরে একে সাম্প্রতিক কালে দেখা পাওয়া গেছে।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এখনো দেখা পাইনি

পাতি বটেরা

Common Quail

Coturnix coturnix
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী পাখি

আমরা ফার্মে যে কোয়েল দেখতে পাই অনেকটা সেরকম দেখতে এই কোয়েলও আমাদের দেশে পরিযায়ী। আকারে ছোট এই পাখিটিকে সাধারনত সারাদেশেই বড় নদীর চরাঞ্চলে, বনের ধারে ও খোলা প্রান্তরে পাওয়া যেতে পারে। খুব দ্রুত উড়তে পারে। এর দেখা পেয়েছিলাম রাজশাহীর পদ্মার এক চরে। বর্তমানে বেশ বিরল, উড়ন্ত অবস্থায় ছবি তোলা গেলে সহজে আইডি করা যায় কারন শীতকালীন রূপে একে দেখতে বৃষ্টি বটেরার চেয়ে খুব আলাদা লাগেনা, তখন এর ডানার পালকে দাগদাগ (barring) দেখে একে চেনা যায়।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
পাতি বটেরা, রাজশাহী

বৃষ্টি বটেরা

Rain Quail

Coturnix coromandelica
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

এই প্রজাতির কোয়েল সম্ভবত আমাদের দেশে পাতি বটেরার চেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে শীতকালীন রুপ দুটোকেই একই রকম লাগে অনেকটা তাই পাতি বটেরা হিসেবে ধরা হয় সম্ভবত। ছবি তোলা খুব কষ্টকর, মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই খুব দ্রুতগতিতে উড়ে চলে যায়। তবে শীতের শেষে যখন পুরুষ পাখিগুলো প্রজননকালীন রূপ পায় তখন আলাদা করা বেশ সহজ, তখন এদের ঠোটের নিচে গলায় বেশ মোটা সাদা মালা দেখা যায় কয়েকটি এবং পেটের দিকটা কালো রঙ ধারন করে। এখনো এর দেখা পাইনি।

বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এখনো দেখা পাইনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top