বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৮ প্রজাতির পেঁচা পাওয়া গেছে
লক্ষী প্যাঁচা
Barn Owl
Tyto alba
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
টাইটো পরিবারের একমাত্র বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়া সদস্য, একে সারাবিশ্বেই দেখা যায়। প্রধান খাবার ইদুর, ছুঁচো, তাই কৃষকের জন্য দারুন উপকারী। আর মানুষের বাসাবাড়ির কার্নিশ ও ভাঙা দেয়ালের ফোকরে বাসা করতে পারে। দিনের বেলা কোথাও লুকিয়ে থাকে আর সন্ধার দিক থেকে শিকার করতে বেরয়। এর ওড়ার সময় ডানায় কোন শব্দই হয়না ফলে ছোট প্রাণীরা এর আগমন সম্পর্কে বুঝতেই পারেনা। চাঁছালো গলায় তীক্ষ্ণ ডাক দেয় এরা, সাধারনত উড়ন্ত অবস্থায় বা প্রজনন মৌসুমে। বসলে এদের দেহের উপরিভাগের হালকা সোনালী রঙ বোঝা যায়, উড়ন্ত অবস্থায় সাদা মনে হয়। চোখ গাড় কালো। ঢাকা শহরে সহ সারাদেশেই মানুষের আবাসস্থলের আশেপাশেই এদের বাস। দিনের বেলা অন্য পাখিদের চোখে পড়ে গেলে বিপদে পড়তে হয় কারন অনেক পাখিই এদের ঠুকরে আহত করে। ছোটবেলা থেকেই এর দেখা পেয়ে আসছি রাতের বেলা তবে প্রথম ছবি তুলতে পারি ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
উদয়ী তামাটে পেঁচা
Oriental Bay-Owl
Phodilus badius
আমাদের দেশের আবাসিক!! পাখি
বাংলাদেশের তালিকায় যোগ হওয়া নতুন পেঁচা এটি। আমাদের দেশের অতিবিরল আবাসিক পাখি, অত্যন্ত লাজুক স্বভাবের এবং বাস করে উচু পাহাড়ি অঞ্চলের বনে। দেহের মূল রঙ তামাটে। খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবন থেকে পরপর দুটি পাখি উদ্ধার হয়েছিলো, এরপর নিশ্চিত হওয়া গেছে যে আমাদের দেশে এই পাখির বাস রয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনার দিকে এর সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা পড়েছি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
পাহাড়ী নিম প্যাঁচা
Mountain Scops-Owl
Otus spilocephalus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের বিরল একটি পেঁচা এটি। আকারে খুব ছোট আর বাস করে চটগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনে। সেসব এলাকায় গেলে নিয়মিতই এর ডাক শোনা যায় রাতে তবে ছবি তোলা অত্যন্ত দুঃসহ। বাংলাদেশে সম্ভবত হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে এর ছবি রয়েছে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
দেশী নিম প্যাঁচা
Indian Scops-Owl
Otus bakkamoena
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এই পেঁচার বাস, বেশ কমই পাওয়া যায়। রাজশাহী অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এদের চোখের আইরিস কমলা রঙ এর এবং ঠোটের আগা কালো। এছাড়া ডাক কন্ঠী নিমপেঁচার চেয়ে আলাদা তাই ডাক শুনতে পেলে সহজেই এর উপস্থিতি জানা যায়। বাংলাদেশে বেশ কয়েকবছর আগে এর ছবি তোলা হয়েছিলো তবে রাজশাহী থেকে এর ডাক ও ছবি একসাথে পাওয়া যাবার পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটি দেশী নিমপেঁচা। রাজশাহী থেকেই প্রথম এর ছবি তুলেছিলাম।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
কন্ঠী নিমপ্যাঁচা
Collared Scops-Owl
Otus lettia
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
সারাদেশে বেশ সহজলভ্য ছোট আকারের এই পেঁচাটির চোখ গাড় কালো, তবে নির্দিষ্ট দিক থেকে আলো পড়লে আইরিসের রঙ এর পার্থক্য বোঝা যায়। এদের ঠোট সাধারনত পুরোটাই ফ্যাকাসে রঙহীন। রাতে এদের ডাক শুনে উপস্থিতি সহজেই বোঝা যায়। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার মিরপুর থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
উদয়ী নিম প্যাঁচা
Oriental Scops-Owl
Otus sunia
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের পেঁচা এটি তবে শীতে সমতলে অল্পবিস্তর নড়াচড়া করে। রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল সহ দেশের বেশ কিছু যায়গায় পাহাড়ের বাইরে এর দেখা পাওয়া গিয়েছে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার মিরপুর থেকে। এদের চোখের আইরিস এর রঙ গাড় হলুদ।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
মেটে মেছো প্যাঁচা
Buffy Fish-Owl
Ketupa ketupu
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বড় আকারের এই মেছো পেঁচাটিকে আমাদের দেশে শুধুমাত্র সুন্দরবনে দেখা মেলে। দেহের রঙ মেটে খয়েরী রঙ এর আর দুচোখের মাঝে সাদাটে বাদামি রঙ দেখা যায়। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
তামাটে মেছো প্যাঁচা
Tawny Fish Owl
Ketupa flavipes
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের মেছো পেঁচাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকারের এই পেঁচার বাস সুন্দরবন সহ ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধুপুর বনে। তবে কয়েক দশক ধরে এর দেখা পাওয়া যায়নি। গাড় তামাটে রঙ এর এই পেঁচার দুচোখের মাঝে সাদাটে-বাদামি রং এর পালক দেখা যায়।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
খয়েরি মেছো প্যাঁচা
Brown Fish-Owl
Ketupa zeylonensis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশে এই প্রজাতির মেছো পেঁচাই সম্ভবত এখনো বেশ সুলভ এবং সারাদেশেই পাওয়া যায়। এরা বড় জলাশয়ের পাশে বড় গাছ রয়েছে এমন স্থানে বাস করতে পারে। গায়ের পালক বেশ কয়েক রকমের হয়ে থাকে। সব মেছো পেঁচাদের মত এদের পা লোমহীন। বড় গাছ বিশেষ করে আমগাছ, শিলকড়ই গাছ ইত্যাদি গাছের যেখান থেকে ডাল চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এরকম গর্তমত যায়গায় বাসা করে বাচ্চা তোলে। গম্ভীরভাবে হুম্ম হুম্ম করে এরা ডাকে, এসিময় এদের গলার গাছের পালক ফুলে ফুলে ওঠে। বলাই বাহুল্য যে প্রধান খাবার মাছ, এছাড়া ছোট জলজ প্রাণীও ধরে খায়। প্রথম ছবি পেয়েছিলাম ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
কালচে হুতোম প্যাঁচা
Dusky Eagle-Owl
Ketupa coromandus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আমাদের দেশের দু প্রজাতির হুতোম পেঁচার মধ্যে এটি প্রথম। সারাদেহের পালক কালচে রঙ এর হয় বলে এমন নাম। পা গোড়ালি পর্যন্ত লোমে ঢাকা, ছোট স্তন্যপায়ী, সাপ ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারন করে। এই প্রজাতির পেঁচা আকারে খয়েরী মেছো পেঁচার চেয়ে সামান্য আকারে বড় হয়। এদের বাসা করার উপযোগী বড় গাছ এদের টিকে থাকার জন্য খুব জরুরী। আমাদের দেশে শুধুমাত্র সুন্দরবনে এদের কয়েক স্থানে দেখা যায়। এছাড়া খুলনা বিভাগের কিছু যায়গায় এবং মধুপুর বনে এদের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এদের ডাক বেশ কর্কশ, খুলনা বিভাগে এর প্রচলিত নাম কতরাইল। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
চিতি-পেট হুতোম প্যাঁচা
Spot-bellied Eagle-Owl
Ketupa nipalensis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রজাতির পেঁচা এবং দ্বিতীয় হুতোম পেঁচা। এদের সারা বুক ও পেটে ছিটে দাগ রয়েছে তাই এমন নাম। আমাদের দেশে শুধুমাত্র সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের গহীন পাহাড়ি বনাঞ্চলে কচিত কদাচিৎ এর দেখা পাওয়া যায়, তবে সুখের কথা হচ্ছে বেশ কিছু বনে এর অস্তিত্ব রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনেহয় বড় আকারের ঈগল বসে আছে। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এশীয় ডোরা প্যাঁচা
Asian Barred Owlet
Glaucidium cuculoides
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
কপালে ডোরা দাগ থেকে এর এমন নাম, আকারে বেশ ছোট এবং গোলগাল। আমাদের দেশের সকল পাহাড়ি বনাঞ্চলে পাওয়া যায়, এছাড়া চা বাগান এলাকার গাছে সহজেই দেখা মেলে। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম শেরপুরের গারো পাহাড় থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
কুটি প্যাঁচা
Jungle Owlet
Glaucidium radiatum
আমাদের দেশের আবাসিক!! পাখি
এই পাখিটিরও কপালে ঘন ডোরাকাটা দাগ থাকে, ডানার উপরিভাগে প্রান্তে লালচে পালক রয়েছে। এদের বিস্তৃতি বাংলাদেশের পশ্চিমাংশে। একটি পেঁচা দুবছর আগে রাজশাহী শহরে চলে আসে এবং এরপর থেকে সেখানেই বসবাস করছে। বাংলাদেশের ঐ একমাত্র স্থানেই এই পেঁচাটিকে পাওয়া যায়। সেখানেই এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
কন্ঠী প্যাঁচা
Collared Owlet
Taenioptynx brodiei
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এটি বাংলাদেশের ক্ষুদ্রতম পেঁচা প্রজাতি, আকারে একটি চড়ুই এর চেয়ে সামান্য বড়। বাংলাদেশে শুধুমাত্র চট্বগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনে এর দেখা মেলে। এর কপালের কাছটায় ফোঁটা ফোঁটা দাগ থাকে আর এর মাথার পেছন দিকে চোখ সাদৃশ্য পালক থাকে যা এই পাখির আত্বরক্ষার বা আক্রমনের একটি কৌশল।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
খুড়ূলে প্যাঁচা
Spotted Owlet
Athene brama
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির গোলগাল পেঁচাটিকে বাংলাদেশের সর্বত্র সহজেই পাওয়া যায়, কমলাটে দেহের উপরিভাগে বড় বড় সাদা ফোঁটা রয়েছে তাই এর এমন নাম। এরা শহরাঞ্চলেও দালানের ইটের কোটরে বাসা করে বাচ্চা তুলে থাকে, এছাড়া গাছের কোটর তো রয়েছেই। এরা দিনের বেলায়ও শিকার করে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
বাদামী বন প্যাঁচা
Brown Wood-Owl
Strix leptogrammica
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রজাতির পেঁচা এটি, আমাদের দেশের সকল ধরণের বনাঞ্চলেই এর দেখা মেলে তবে বর্তমানে খুব কমই পাওয়া যায়। মধুপুর বন থেকে সম্ভবত হারিয়ে গেছে! সর্বশেষ সুন্দরবনে বেশ কয়েকবার পাওয়া গেছে। এদের চোখের চারপাশে কালো চশমার মত পালক রয়েছে, দেখতে বেশ রহস্যময় ও সুন্দর। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
খাটো-কান প্যাঁচা
Short-eared Owl
Asio flammeus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
আমাদের দেশের একমাত্র পরিযায়ী পেঁচা এটি, শীতকালে খোলা প্রান্তর ও চরাঞ্চল জাতীয় যায়গায় দেখা মেলে। মাটিতে ঘাস ও ঝোপের মধ্যে বসে থাকে, দিনের বেলায়ও শিকার করে। মাথার উপরে কানের স্থলে খাটো কানের মত পালক রয়েছে তবে মটেও খাঁড়া নয়। দেখতে খুব সুন্দর। এদের পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পুরু পালকে ঢাকা থাকে। বাংলাদেশের বড় নদীর অববাহিকায় চরাঞ্চলে এর দেখা পাওয়া যায় সাধারনত তবে ঢাকা শহরের আকাশে উড়ন্ত অবস্থায়, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে এবং সুন্দরবনেও এর দেখা পাওয়া গিয়েছে গত কয়েক বছরে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
খয়েরী শিকরে প্যাঁচা
Brown Boobook
Ninox scutulata
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
ছোট আকৃতির বেশ সুলভ এই প্রজাতির পেঁচা, সারাদেশে সহ শহরাঞ্চলেও উদ্যানজাতীয় যায়গায় দেখা মেলে। শিকার ধরার জন্য এরা যখন ঝাঁপ দেয় তখন দেখতে ঠিক বাজপাখির মত মনেহয়। এজন্য এর আরেক নাম Brown Hawk-owl. এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ঢাকার মিরপুর থেকে।