বাংলাদেশে কবুতর, ঘুঘু, হরিয়াল ও ধুমকল মিলিয়ে মোট ১৮ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে।
গোলা পায়রা
Rock Pigeon
Columba livia
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
সারা বাংলাদেশে এমনকি সারা পৃথিবীতে এর দেখা পাওয়া যায়। মানুষের বাসাবাড়ির কোনায়, বিভিন্ন স্থাপনায় সুবিধাজনক যায়গা পেলেই এরা বাসা তৈরী করে। প্রচুর পরিমানে বংশবিস্তার করে বলে এর সংখ্যা বেশ। এরা খাদ্যের জন্যে মানুষের চাষাবাদ করা জমির উপরে বেশ অনেকটাই নির্ভরশীল, ফসল কাটার পরে এদেরকে দলে দলে এসে খাবার খেতে দেখা যায়। এছাড়া পোষা কবুতরের ঝাঁকেও এরা মিশে যেতে পারে। বিভিন্ন নদীর চরাঞ্চলেও এদের দেখা যায় দলে দলে খাবার খেতে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
মেটে-টুপি পায়রা
Pale-capped Pigeon
Columba punicea
আমাদের শীতের পরিযায়ী
আমাদের দেশের অত্যন্ত বিরল প্রজাতির এই কবুতরটিকে বেশ কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশে দেখা পাওয়া যায়নি। এদের বাসা সাধারনত আমাদের দেশের উত্তরে ভারতের উচু পাহাড়ি বনে, মাঝেমধ্যে নিচে নেমে আসতে পারে।
বিশ্বে সংকটাপন্ন
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
উদয়ী রাজঘুঘু
Oriental Turtle-Dove
Streptopelia orientalis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
সাধারন ঘুঘুর চেয়ে আকারে বড় এবং দেখতে আলাদা এই ঘুঘু। এদের ঘাড়ের দুইপাশে চারকোনা ডোরাকাটা পালক রয়েছে যা ডাকার সময় ফুলে ফুলে ওঠে। আমাদের দেশের সকল ধরনের বনাঞ্চলের আশেপাশে খোলা যায়গায় বেশি দেখা যায় তবে অন্যান্য স্থানেও কমবেশি পাওয়া যায় অন্য ঘুঘুর ঝাঁকে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম চট্বগ্রাম থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
ইউরেশীয় কন্ঠীঘুঘু
Eurasian Collared-Dove
Streptopelia decaocto
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
ইউরোপ থেকে এশিয়ার বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে এই ঘুঘুটির বাস, আমাদের দেশের আবাসিক পাখি। এদের বাদামি রঙ এর দেহ, ঘাড়ে কালো পালকের তৈরী মারা রয়েছে, লেজ লম্বা আর চোখ লাল। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে একই রকম। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার অদূরে কেরানিগঞ্জ থেকে।e
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
লাল কন্ঠীঘুঘু
Red Collared-Dove
Streptopelia tranquebarica
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
কন্ঠী ঘুঘুর চেয়ে সামান্য ছোট আকৃতির এবং খাটো লেজবিশিষ্ট এই ঘুঘুটি দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। পুরুষ পাখির দেহ লালচে হয়, স্ত্রী পাখিগুলো বাদামী, দেখতে অনেকটা কন্ঠী ঘুঘুর মত হয়। এরা একসাথে বড় ঝাঁক তৈরী করতে পারে, আমি একসাথে কয়েকশো লাল কন্ঠী ঘুঘুর ঝাঁক দেখেছি। শহরাঞ্চলে খুব বেশি দেখা যায়না, প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
পূবের তিলা ঘুঘু
Eastern Spotted Dove
Spilopelia chinensis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
এর বিস্তৃতি আমাদের দেশের পূর্বে, আমাদের দেশের তালিকায় এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বহুদিন এর দেখা পাবার দাবী করতে কাউকে দেখিনি।
বিশ্বে মহাবিপন্ন, বিপন্ন, সংকটাপন্ন, প্রায়-বিপদগ্রস্থ, নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
তিলা ঘুঘু
Spotted Dove
Spilopelia chinensis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সুলভ আবাসিক ঘুঘুপাখি এটি। সারাদেশেই খুব ভালো সংখ্যায় এরা টিকে রয়েছে, প্রচুর চোরাশিকারও হতে হয় এই পাখিটিকে। প্রায়ই ঝাঁকে ঝাঁকে বিষ দেয়া খাবার খেয়ে মারা পড়ে বলে খবর বের হয় অপরাধ মানুষের শষ্য খেয়ে ফেলেছে কিনা! এরা বসতবাড়ির কার্নিশ সহ কলাগাছ সহ ছোট গাছে বাসা করে বাচ্চা তোলে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
হাসি ঘুঘু
Laughing Dove
Spilopelia senegalensis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
এই ঘুঘু আমাদের দেশে বহুদ বছর হল দেখা মেলেনি তবে এর বিস্তৃতি আমাদের দেশের পশ্চিম দিকে ভারতে। সেদিক থেকে হয়তো কয়েকটি চলে এসেছিলো বহু আগে, সেই থেকে বাংলাদেশের পাখির তালিকায় এদের নাম উঠেছে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
ডোরা পাপিয়া-ঘুঘু
Barred Cuckoo-dove
Macropygia unchall
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বড় আকারের লম্বা লেজবিশিষ্ট এই প্রজাতির ঘুঘুর আচরনে পাপিয়ার মত কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। এর বাস আমাদের দেশের উত্তরে ভারতের উচু পাহাড়ি জঙ্গলে এবং সেখান থেকে নেমে আসা কয়েকটিই আমাদের দেশে বেশ কয়েক দশক আগে দেখা গিয়েছিলো। অনেকদিন একে আর পাওয়া যায়নি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
শ্যামাঘুঘু
Asian Emerald Dove
Chalcophaps indica
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
ছোট আকারের খাটো লেজবিশিষ্ট খুব সুন্দর এই পাখিটি সাধারনত বাঁশবাগান জাতীয় যায়গা পছন্দ করে। আমাদের দেশের বনাঞ্চলগুলো সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামীন বনে এর অস্তিত্ব রয়েছে এখনো। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের উপরিভাগ চকচকে সবুজ রঙ এর এবং মাথার উপরে চাঁদি ছাই রঙ এর। এরা খুব দ্রুত উড়তে পারে, বনে গিয়ে পাশ দিয়ে উরে যাবার সময় মনেহয় অন্যকিছু উড়ে গেলো। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ঢাকার মিরপুর থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
কমলা-বুক হরিয়াল
Orange-breasted Green-Pigeon
Treron bicinctus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আমাদের দেশে বেশ অনেকটা যায়গা জুড়ে এই প্রজাতির হরিয়াল চোখে পড়ে, পুরুষ পাখিগুলোর বুকের কাছটা গাড় কমলাটে হয়, পা লাল এবং লেজের উপরিভাগ ও ডানার নিচে বেগুনী। আমাদের দেশের ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্বগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের বনাঞ্চলে এবং এর বাইরেও লোকালয়ে এর দেখা মেলে হলদে-পা হরিয়ালের ঝাঁকে। এছাড়াও দেশের অন্য অঞ্চলে কদাচিৎ এর দেখা মিলে থাকে। প্রথম ছবি তুলেছিলাম সাতছড়ি বন থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পম্পাডুর হরিয়াল
Ashy-headed Green-Pigeon
Treron phayrei
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আমাদের দেশের সকল ধরণের বনাঞ্চলে এর উপস্থিতি রয়েছে, তবে সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের বনে বেশি দেখা মেলে। পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ের মাথার উপরের চাঁদি ছাই রঙ এর , তবে শুধু পুরুষ পাখির ডানার উপরিভাগ লালচে। দেখতে বেশ সুন্দর, আকারে বেশ ছোট। প্রথম ছবি তুলেছিলাম সাতছড়ি থেকে।
বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
মোটা-ঠুটি হরিয়াল
Thick-billed Green-Pigeon
Treron curvirostra
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
সবুজ রঙ এর মোটা ঠোট বিশিষ্ট এই হরিয়ালের ঠোটের গোঁড়ায় লাল ছোপ রয়েছে, দেখতে খুব সুন্দর। আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলে দেখা মেলে তবে মাঝেমধ্যে বাইরেও দেখা মেলে। ঢাকা শহরে কয়েকবার দেখা গেছে সম্প্রতি। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতছড়ি বন থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
হলদে-পা হরিয়াল
Yellow-footed Green-Pigeon
Treron phoenicopterus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আমাদের দেশের সর্বত্র এই প্রজাতির হরিয়ালকে বড় বড় ঝাঁকে দেখা মেলে। বিশেষ করে বটফল পাকার মৌসুমে এরা অনেকগুলো পাখি মিলে বিভিন্ন গাছে ফল খাবার জন্য জড়ো হয়। একমাত্র এই প্রজাতির হরিয়ালের পায়ের রঙ হলুদ, সুতরাং পা দেখতে পেলে সহজেই এদের চেনা যায়। আর দেহের রঙ হালকা হলদেটে সবুজ। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
ল্যাঞ্জা হরিয়াল
Pin-tailed Green-Pigeon
Treron apicauda
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এটি বাংলাদেশের এক বিরল প্রজাতির হরিয়াল, শুধুমাত্র চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনে কদাচিৎ দেখা মেলে, সিলেট বিভাগের বনেও কয়েকবার দেখা মিলেছে বলে জানি। এদের লেজ বেশ লম্বা হয়ে কোনাকার আকৃতি ধারন করে, এজন্য এদের এমন নাম আর ঠোট নীলাভ। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
গেজ-লেজি হরিয়াল
Wedge-tailed Green-Pigeon
Treron sphenurus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির হরিয়ালও আমাদের দেশে বেশ বিরল, লেজের আকৃতি গেজ এর মত অর্থাৎ সরু হতে হতে শেষ এবং একটু পুরু। সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের বনেই শুধুমাত্র এদের দেখা মেলে, পুরুষ পাখিগুলোর ডানার উপরিভাগ বেশ মিষ্টি লালচে রঙ এর , ঠোট নিলাভ। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতছড়ি বন থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
সবুজ ধুমকল
Green Imperial-Pigeon
Ducula aenea
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আমাদের দেশে দুধরনের ধুমকল পাওয়া যায় তার মধ্যে এটি দেশের অনেক বনাঞ্চলেই রয়েছে। সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনাঞ্চলে সহ সুন্দরবন এবং গারো পাহাড়েও এর দেখা মিলেছে। এর ডানার উপরিভাগ সবুজ, গলা সরু। একটি বা কয়েকটি একত্রে উড়ে যেতে দেখা যায়, উচু গাছের মগডালে ছাড়া সাধারনত বসে না। প্রথম ছবি তুলেছিলাম সাতছড়ি থেকে।
বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাহাড়ি ধুমকল
Mountain Imperial-Pigeon
Ducula badia
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বড় আকারের বাদামী রঙ এর এই ধুমকল শুধুমাত্র আমাদের দেশের চট্টগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনে দেখা মেলে। তবে সিলেট বিভাগে কয়েকবার সবুজ ধুমকলের ঝাঁকে দেখা গিয়েছে। এদের গায়ের রঙ বাদামী, ডানাদুটো লালচে, ঠোট বেশ লম্বা তবে বেশিরভাগ পালকে ঢাকা থাকে, চোখের আইরিস নীলচে। এখনো এর দেখা পাইনি।