আমাদের দেশে মোট আট প্রজাতির মানিকজোড় পাওয়া গেছে
শামুকখোল
Asian Openbill
Anastomus oscitans
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুলভ মানিকজোড় এটি। আমাদের দেশের আবাসিক পাখি, সাধারনত শিমুল গাছে বাসা করে। এদের দুই ঠোটের মাঝে একটু ফাকা যায়গা রয়েছে যা শামুক চাপ দিয়ে ভাঙার পরে শামুকের খোলস বের করে দিতে সাহায্য করে, গায়ের পালক ময়লা সাদা, তবে বাচ্চা পাখির পালক ধবধবে সাদা হয়। ডানার অগ্রভাগ কালচে এবং পা গুলো লাল। সারাদেশেই জলাশয়ের আশেপাশে এদের দেখা মেলে, শীতে পানি কমে আসার সাথে সাথে সারাদেশ থেকে এসে বিভিন্ন বড় জলাশয়ের আশেপাশে জড়ো হয়। গোশতের জন্য এরা চোরাশিকারীদের হাতে প্রায়ই মারা পড়ছে যা বেশ চিন্তার বিষয়। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
কালা মানিকজোড়
Black Stork
Ciconia nigra
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
আমাদের দেশের বেশ বিরল প্রজাতির মানিকজড় এরা, সারাদেহ কালো রঙ এর, ঠোট, পা ও চোখের চারপাশ গাড় লাল। সাধারনত কয়েকটি পাখি একত্রে দেখা যায়। আমাদের দেশে বড় নদীর অববাহিকায় বিশেষ করে পদ্মার অববাহিকায় চরাঞ্চলে শীতকালে এদের দেখা মেলে।
বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
ধলা-গলা মানিকজোড়
Asian Woolly-necked Stork
Ciconia episcopus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি/ শীতের পরিযায়ী
আমাদের দেশের বিরল পরিযায়ী বলে ধারনা করা হত তবে কয়েকবছর ধরে রাজশাহী বিভাগের কিছু যায়গায় এরা নিয়মিত বাসা তুলে বাচ্চা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী বিভাগে পদ্মা নদীর অববাহিকায় কদাচিৎ এক বা একাধিক পাখি চোখে পড়ে। এর বাইরে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, পাবনা, সুন্দরবন ইত্যাদি যায়গায় দেখা মিলেছে। এদের সারাদেহ কালো পালকে ঢাকা আর গলা বেশ ঢিলে সাদা পালকে ডাকা যা দেখলে উল এর মত। এর প্রথম ছবি পেয়েছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার চর থেকে।
বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
সাদা মানিকজোড়
White Stork
Ciconia ciconia
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী/আর পাওয়া যায়না
ধবধবে সাদা দেহ আর গাড় লাল ঠোটবিশিষ্ট এই পাখিটি আমাদের দেশের অত্যন্ত বিরল পরিযায়ী পাখি। তবে প্রায় অর্ধশতাব্দি ধরে আমাদের দেশে একে আসতে দেখা যায়নি। সারাবিশ্বেই এদের সংখ্যা দ্রুত কমছে।
বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
লোহা জঙ্ঘা/ কাল-ঘাড় মানিকজোড়
Black-necked Stork
Ephippiorhynchus asiaticus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাখি এটি উচ্চতার দিক থেকে। এদের গলা ও মাথা চকচকে নীলচে রঙ এর যা আপাত দৃষ্টিতে কালো মনে হয় তবে আলো পড়লে চকচক করে। আমাদের দেশের অতি বিরল পরিযায়ী মানিকজোড় এটি। প্রধানত পদ্মা নদীর অববাহিকায় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মাঝেমধ্যে শীতে দেখা মেলে তবে নিয়মিত নয়। এছাড়া সম্প্রতি মৌলভিবাজারের হাইল হাওড় ও হাকালুকি হাওড়ে কমবয়স্ক দুটি পাখির দেখা মিলেছে। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
বড় হাড়গিলা
Greater Adjutant
Leptoptilos dubius
আমাদের দেশের সাবেক আবাসিক পাখি/বর্তমানে বিলুপ্ত
বিশ্বে দ্রুত সংখ্যা কমতে থাকা এই পাখিটি বর্তমানে আমাদের দেশে আর পাওয়া যায়না। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে বগুড়ায় একটি পাখির দেখা মিলেছিলো। বাংলাদেশের উত্তরে আসামের গৌহাটি, পশ্চিমে বিহারে এবং দক্ষীণ-পূর্বের দেশ ক্যাম্বোডিয়াতে এর কিছু সংখ্যক উপস্থিতি রয়েছে। শোনা যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকায় নাকি এখনো আসে মাঝেমধ্যে তবে এখনো কোন বার্ডার এর চোখে পড়েনি। এরা শকুনের মত শবভোজি অর্থাৎ মৃত প্রাণী ভক্ষণ করতে পারে, এছাড়া মাছ ও ছোট প্রাণী শিকার করে খায়। গলায় বড় চামড়ার থলে দেখা যায়। এদের বাসা বানানো ও ডিম পাড়ার জন্য এবং বিশ্রাম নেয়ার জন্য অত্যন্ত উচু গাছ দরকার যা দ্রুত কমে আসায় এদের সংখ্যা ভয়াবহ দ্রুতগতিতে কমছে।
বিশ্বে বিপন্ন
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
ছোট মদনটাক
Lesser Adjutant
Leptoptilos javanicus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আকারে হাড়গিলার চেয়ে কিছুতা ছোট এই প্রজাতির মানিকজোড় আমাদের দেশের কিছু স্থানে টিকে রয়েছে। সুন্দরবনে এর সবচেয়ে বড় সংখ্যা দেখা মেলে, এছাড়া রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায়ই দেখা যায়। রংপুর বিভাগে কয়েক যায়গায় এদের প্রজননের কথা জানা গেছে তবে সংখ্যায় খুব কম ,এছাড়া সিলেট বিভাগেও এদের দেখা যায় কালেভদ্রে, সেখানেও একটি কলোনী ছিল। প্রথম দেখেছিলাম সুন্দরবন থেকে।
বিশ্বে সংকটাপন্ন
এদেশে কমই দেখা মেলে
রাঙ্গা মানিকজোড়
Painted Stork
Mycteria leucocephala
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বেশ কয়েকবছর আগেও একে আমাদের দেশে বিরল পরিযায়ী পাখি হিসেবে ধরা হত, তবে সম্প্রতি কয়েকবছরে এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলা যায়। পদ্মা নদীর অববাহিকায় বিভিন্ন জেলায় এর কয়েকশো পাখির ঝাঁক এর দেখা মিলেছে, এছাড়া সারাদেশের অনেক স্থান থেকেই এমনকি চট্বগ্রাম বিভাগ থেকেও এর ছোট বড় ঝাঁক দেখা যাবার কথা জানা গেছে। সুখের কথা হল এসব ছোট ঝাঁকে বড় সংখ্যক ছিল কমবয়স্ক পাখি। অনুমান ক্রয়া যায় এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর বাংলাদেশের মধ্যেও কোথাও এরা হয়তো প্রজনন করছে, সামনে খবর পাওয়া যাবে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম রাজশাহীর পদ্মার চর থেকে। প্রাপ্তবয়স্ক পাখিদের ডানার উপরিভাগে গোলাপী ছোপ থাকে মনেহয় কেউ রঙ মাখিয়ে দিয়েছে, সেখান থেকে এদের এমন নাম। এদের মাথা ও ঠোট হলদেটে হয়ে থাকে।