বাংলাদেশে টুনটুনি, প্রিনিয়া ও ছোটন মিলিয়ে মোট দশ প্রজাতি
পাতি টুনটুনি
Common Tailorbird
Orthotomus sutorius
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
খুব পরিচিত এই আবাসিক পাখিটিকে সারাদেশে সহজেই বাসাবাড়ির আশেপাশে সহ সকল পরিবেশে পাওয়া যায়। গাছের পাতা মুড়িয়ে সেলাই করে বাসা তৈরী করে, এজন্য এমন নাম। প্রজননকালে পুরুষ পাখিগুলোর লেজ বেশ লম্বা হয় এবং গলার দুইপাশে অল্প কিছু পালক কালো রঙ এর হয়ে থাকে। গাছের চিকন ডাল বেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওপরে ওঠে আর লেজ উচু করে রাখে। একঘেয়ে একটানা ডাক দেয়। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকাতেই।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
কালো-গলা টুনটুনি
Dark-necked Tailorbird
Orthotomus atrogularis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির টুনটুনি বাংলাদেশের শুধুমাত্র সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের গলার কাছটা কালচে, মাথার চাঁদি লালচে আর পুচ্ছ এর কাছটা হলদেটে। এদের গায়ের উপরিভাগের সবুজ রঙ পাতি টুনটুনির চেয়ে গাড় ফলে সহজেই চোখে পড়ে, মাথার আকার বড় আর এদের ঠোট পাতি টুনটুনির চেয়ে লম্বা। সিলেট বিভাগের বেশ কিছু বনে একে দেখেছি কিন্ছতু ছবি তুলতে পারিনি, পরে চট্বগ্রামের হাজারিখিল বন থেকে ছবি তুলেছি ও ডাক রেকর্ড করেছি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
লালচে প্রিনিয়া
Rufescent Prinia
Prinia rufescens
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলের ধারের ঝোপঝাড় এবং গাছে পাওয়া যায় এই প্রজাতির প্রিনিয়াটিকে। বুকের কাছটা লালচে এবং লম্বা সাদা ভ্রূ রয়েছে। অনেকসময় মেটেবুক প্রিনিয়া এর মত দেখতে মনে হতে পারে সেক্ষেত্রে ডাক শুনে আলাদা করা যায়। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
মেটে-বুক প্রিনিয়া
Grey-breasted Prinia
Prinia hodgsonii
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
ঝোপঝাড় ও ঝোপবন জাতীয় যায়গায় এদের সারাদেশেই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের আবাসিক পাখি। লেজের নিচের দিকে সাদা পালক থাকে। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে। এই পাখিটির বেশ কিছু রূপ রয়েছে, ফলে প্রায়ই হলদে-পেট এবং লালচে প্রিনিয়ার সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যেতে পারে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
সুন্দরী প্রিনিয়া
Delicate (Graceful) Prinia
Prinia lepida
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
মূলত নদীর আশেপাশে নলবন ও লম্বা ঘাস জাতীয় স্থানে বাস করে। পদ্মা নদীর অববাহিকায় ছাড়া একটু কমই পাওয়া যায়। এদের মাথার উপরে আর পিঠে লম্বা ছিটে দাগ থাকে, ঠোট কালো আর বুক সাদাটে। আগে নাম ছিলো গ্রেসফুল প্রিনিয়া তবে সম্প্রতি ভাগ হয়ে দুইটি প্রজাতিতে আলাদা হয়েছে, আমাদের দেশেরটার নতুন নাম হচ্ছে ডেলিকেট প্রিনিয়া, আকারে বেশ ছোট এজন্য। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার বসিলা থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
হলদে-পেট প্রিনিয়া
Yellow-bellied Prinia
Prinia flaviventris
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের দুইটি অঞ্চলে মূলত একে পাওয়া যায়। এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি বাংলাদেশের পুর্ব ও পশ্চিম দিকে। তার রেশ হিসেবে আমাদের চট্বগ্রাম বিভাগের কিছু স্থানে সমতল ও পাহাড়ি ঘাসবনে একে পাওয়া যায়। আর খুলনা বিভাগে বিশেষ করে সুন্দরবনে দেখা যায়। কুষ্টিয়ার চর থেকেও পাওয়া গিয়েছিলো। হয়তো আগে দেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই ছিলো। চট্বগ্রাম থেকে আমি এর ছবি তুলেছি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
ছাই-রঙা প্রিনিয়া
Ashy Prinia
Prinia socialis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি!!!!
বাংলাদেশে এই প্রজাতির প্রিনিয়ার দেখা নেই অনেক বছর হল। অথচ বাংলাদেশের পশ্চিম অংশের বর্ডারের ওপারেই একে নিয়মিত দেখা যায়। ছাইরঙ উপরিভাগ এবং বাদামী বুক-পেট বিশিষ্ট এই প্রিনিয়াটিকে বেশ কয়েক দশক আগে বাংলাদেশে সর্বশেষ দেখা গেছিলো।আমার ধারনা বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্তঘেষা এলাকায় এখনো থাকলেও থাকতে পারে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
নিরল প্রিনিয়া
Plain Prinia
Prinia inornata
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুলভ এই প্রিনিয়াটিকে সারাদেশেই নল ও লম্বা ঘাসবিশিষ্ট ঝোপে সহজেই পাওয়া যায়। দেখতে বেশ কয়েক ধরনের হয়ে থাকে, সরু দেহ এবং লম্বা লেজবিশিষ্ট। সাধারনত এদের দেহের উপরিভাগ দাগহীন হয় এজন্য নাম প্লেইন, আর সাদাটে ভ্রূ রয়েছে। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ঢাকার কেরানিগঞ্জ থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
ভোমরা ছোটন
Zitting Cisticola
Cisticola juncidis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
খুব চঞ্চল ও ছোট আকৃতির পাখি এই ভোমরা ছোটন। অপর নাম ছোট ডিগডিগ। ভয় পেলে বা উত্তেজিত হলে আকাশে উড়ে ডিগ ডিগ করে ডাকতে থাকে বলে এমন নাম। মাঝেমধ্যে লম্বা ঘাসে বসে লেজটাকে ছড়িয়ে দেয়। এজন্য এর আরেক নাম Streaked Fantail Warbler. সারাদেহের উপরিভাগে দাগদাগ রয়েছে। ঘাসবনের মধ্যেই বাসা করে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
সোনালী-মাথা ছোটন
Golden-headed Cisticola
Cisticola exilis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের অত্যন্ত বিরল ছোটন। সিলেট বিভাগের একটিমাত্র স্থানেই একে পাওয়া যেত বা যায়। কয়েক বছর সেখানেও দেখা পাওয়া যায়নি। এর বাইরে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় পাওয়া যেতে পারে বলে আমার ধারনা, কারন ভারতের গজলডোবায় তিস্তার ব্যারেজ এলাকায় বেশ ভালো সংখ্যায় পাওয়া যায়। এর দুইটি উপপ্রজাতি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। প্রজননকালে মাথা দাগহীন সোনালী রঙ ধারন করে। এছাড়া শীতকালে এদের চেনার উপায় হল ঘাড়ের কাছটা দাগহীন, সাদা ভ্রূ নেই, যা ভোমরা ছোটনের রয়েছে। বাংলাদেশে যেখানে পাওয়া যায় সেখানে বেশ কয়েক বছর বিভিন্ন সময়ে গিয়েও এর এখনো দেখা পাইনি।