বাংলাদেশে মোট ০৩ প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা মেলে
“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থাকি, করো শিল্পের বড়াই”, এই ছড়া আমরা প্রায় সকলেই ছোটবেলায় পড়েছি। তালগাছে বাবুই পাখি বাসা করে এমনটি গ্রামে বাস করা লোকদের কাছে এক সাধারন দৃশ্য। বাংলাদেশের সর্বত্রই এই সুলভ পাখিটিকে পাওয়া যায়, যার নাম দেশী বাবুই। এটি সহ বাংলাদেশে মোট তিন প্রজাতির বাবুই পাখি পাওয়া যায়। যাদের সবগুলোর ছবিই আমি তুলেছি। বর্তমানে তাল-নারিকেল জাতীয় গাছ কমে যাওয়ায় ও নদী চরের ঘাসবন কেটে ফেলায় এদের বাস্তুসংস্থান এর সংকট দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া ধান খায় বলে জাল পেতে শিকারও করা হয় প্রচুর।
দেশী বাবুই
Baya Weaver
Ploceus philippinus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির বাবুই পাখি সারাদেশে পাওয়া যায় এবং বেশ সুলভ। যেকোন সুবিধাজনক গাছেই এরা বাসা করে। বাবুই পাখি তালগাছে বেশি বাসা বানায় তবে আমি এপর্যন্ত ১৪-১৫ ধরণের গাছে একে বাসা বানাতে দেখেছি। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি শীতে দেখতে প্রায় একই রকম, তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখিগুলোর মাথায় ও গলায় গাড় হলুদ রঙ আসে। শীতে এরা বিভিন্ন লম্বা ঘাসের বনে রাত কাটায় তখন একেক ঝাঁকে শত থেকে হাজার পর্যন্ত পাখি থাকতে পারে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
কালো-বুক বাবুই
Black-breasted Weaver
Ploceus benghalensis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি/গ্রীষ্মের পরিযায়ী
এই প্রজাতির বাবুই সাধারনত বড় নদীর ধারে বাস করে। বিশেষ করে পদ্মার অববাহিকায় একে ভালো পাওয়া যায়। এর আরেক নাম হচ্ছে Bengal Weaver বা বাংলা বাবুই। সকল বয়সের পাখির বুকেই কালো রঙ কমবেশী দেখা যায়। প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখিগুলোর বুকের উপরিভাগ কালো হয়ে যায় আর মাথার চুড়া হয় হলুদ। তখন এদের দেখতে বেশ লাগে। এরা দেশী বাবুই থেকে সামান্য মোটা, আর বাসা করে সাধারনত লম্বা সবুজ ঘাসের মধ্যে। আমি এর প্রথম ছবি তুলি ঢাকার কেরানীগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর ধারে। এছাড়া রাজশাহী ও কুষ্টিয়ার পদ্মার চরে একে দেখেছি। সারাবছর এক যায়গায় পাওয়া যায়না।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
ডোরা বাবুই
Streaked Weaver
Ploceus manyar
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি/গ্রীষ্মের পরিযায়ী
বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্লভ হচ্ছে এই প্রজাতির বাবুই। ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জের পদ্মার চরে সহজে একে দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া চট্বগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে একে দেখা যায়। সম্প্রতি রাজশাহী ও পূর্ব-সুন্দরবনেও দেখা গেছে। এর আরেক নাম দাগী বাবুই, কারন এর বুকে কালো ডোরা দাগ রয়েছে। প্রজনন ঋতুতে এর মুখের দুপাশে কালো হয়ে যায়, বুকের দাগগুলো গাড় হয় আর মাথায় হলুদ টুপি দেখা যায়। এরাও নদীর চরের লম্বা ঘাসবনে বাসা করে। সারাবছর এক যায়গায় পাওয়া যায়না। আমি প্রথম এর ছবি তুলি মুন্সিগঞ্জের পদ্মার এক চরে, ঢাকার কাছাকাছি ধলেশ্বরী নদীর পাড়েও একে দেখেছি ও ছবি তুলেছি।