বাংলাদেশে কাঠঠোকরা ও সমগোত্রীয় মিলিয়ে মোট ২১ প্রজাতি রয়েছে
ইউরেশীয় মাঠঠোকরা
Eurasian Wryneck
Jynx torquilla
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
এই পাখিটি কাঠঠোকরা পরিবারের কিন্তু এরা একটু আলাদা। আমাদের দেশে শীতের পরিযায়ী, এদেরকে মাটিতে ঠুকরে পোকা বের করে খায়। এরা খোলা প্রান্তরে থাকে সাধারনত, সেখানের ছোট গাছ থেকেও খাবার সংগ্রহ করে। আর আশেপাশে বড় শিকারী পাখি থাকলে বা এদের কেউ ধরে ফেললে এরা এদের ঘাড়কে সাপের মত আকাবাকা করতে থাকে যাতে দেখে শিকারী ভয় পেয়ে যায়, এটি এদের আত্বরক্ষার উপায়, এই আচরন থেকেই এদের নাম হয়েছে রাইনেক, বাংলায় ঘাড়ব্যাথাও বলা হয়। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার উত্তরা থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
তিলা কুটিকুড়ালি
Speckled Piculet
Picumnus innominatus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট আকারের কাঠঠোকরাদের অন্যতম। পিঠের দিকটা হলদে-সবুজাভ এবং বুকে কালো ছিটে দাগ রয়েছে সেখান থেকে এর এমন নাম। গাছের চিকন ডালে ডালে খুটে খুটে পোকা ধরে খায়। আমাদের দেশের সুন্দরবনে সহজেই চোখে পড়ে, এছাড়া সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনে রয়েছে। এখনো এর ছবি পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
সাদা-ভ্রু কুটিকুড়ালি
White-browed Piculet
Sasia ochracea
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট আকৃতির কাঠঠোকরা। কমলা রঙ এর বল এর মত শরীর, আর সাদা ভ্রু রয়েছে এর। আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনে এর দেখা পাওয়া যায়। এখনো ছবি পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
সাদা-ছিটে কাঠঠোকরা
Heart-spotted Woodpecker
Hemicircus canente
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি/শীতের পরিযায়ী
এই প্রজাতির কাঠঠোকরা আমাদের দেশে অতিবিরল। এক দশকের বেশি সময় ধরে এর দেখা পাওয়া যায়নি আমাদের দেশে। সর্বশেষ দেখা গিয়েছে সম্ভবত কক্সবাজারের ইনানি এবং রাঙামাটির বনে। ছোট আকৃতির কালো রঙ এর পিঠ এবং ধুসর ফ্যাকাসে বুকে হার্ট আকৃতির ছোট ছোট কালো ছিটে রয়েছে এই কাঠঠোকরার।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
বাদামী-টুপি বামন কাঠঠোকরা
Brown-capped Woodpecker
Yungipicus nanus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের খুব বিরল একটি কাঠঠোকরা এটি, কয়েক বছর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি উদ্যানমত যায়গায় আমাদের দেশে প্রথম দেখা গিয়েছিলো। এর আরেক নাম Indian Pygmy Woodpecker ।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
মেটে-টুপি বামন কাঠঠোকরা
Grey-capped Pygmy Woodpecker
Yungipicus canicapillus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
মাথার চুড়া ছাইরঙ্গা এবং আকারে খুব ছোট এই কাঠঠোকরাটি আমাদের দেশের প্রায় সকল বনেই পাওয়া যায়। দেখতে অনেকটা বাতাবি কাঠঠোকরার সাথে মিল রয়েছে তবে পার্থক্য হল এর চোখের উপর দিয়ে একটি কালো রেখা গিয়েছে আর এর বুকে লম্বা লম্বা দাগ থাকে, আর আকারে ছোট তা বলাই বাহুল্য। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম সুন্দরবন এর করমজল থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
হলদে-চুড়া কাঠঠোকরা
Yellow-crowned Woodpecker
Leiopicus mahrattensis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের এক বিরল কাঠঠোকরা এটি, বাংলাদেশের পাখির তালিকায় এর উল্লেখ দেখা যায়, সম্ভবত কয়েক দশক আগে এর সর্বশেষ দেখা পাওয়া গেছিলো।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
বাতাবি কাঠঠোকরা
Fulvous-breasted Woodpecker
Dendrocopos macei
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতিটিকে সারা বাংলাদেশেই পাওয়া যায়, সকল ধরণের পরিবেশে এরা টিকে থাকতে পারে এবং সহজেই দেখা মেলে। প্রায় সময়ই এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। পুরুষ পাখিগুলোর মাথার চুড়া লাল এবং স্ত্রী পাখিগুলর কালো হয়। প্রথম ছবি তুলেছিলাম সাতক্ষীরা থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
তামাটে কাঠঠোকরা
Bay Woodpecker
Blythipicus pyrrhotis
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
গাড় খয়েরী অর্থাৎ তামাটে রঙ এর এই কাঠঠোকরাটির ঠোট বেশ লম্বা, এছাড়া এর ঘাড়ে গাড় লাল পালক থাকে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখিগুলোর। বাংলাদেশে বেশ বিরল। সিলেট বিভাগে কয়েকটি পুরাতন রেকর্ড রয়েছে তবে বাংলাদেশে বর্তমানে শুধু চট্বগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনেই একমাত্র পাওয়া যায়। এরা বাঁশবাগান পছন্দ করে, এদের ডাক শুনে সহজেই বুঝে ফেলা যায় আশেপাশে এই কাঠঠোকরা রয়েছে। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
বড় কাঠঠোকরা
Greater Flameback
Chrysocolaptes guttacristatus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
সোনালী-পিঠ কাঠঠোকরাদের মধ্যে এটি বৃহত্তম এবং প্রায় সারা বাংলাদেশেই এদের দেখা পাওয়া যায়। সকল ধরনের বনাঞ্চলে সহ দেশের অনেক স্থানেই গ্রামীন বনাঞ্চল ও উদ্যান জাতীয় যায়গায় এর দেখা মেলে। পুরুষ পাখিগুলোর মাথার চুড়া লাল এবং স্ত্রী পাখিগুলোর কালো। এদের প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতছড়ি বন থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
হিমালয়ী কাঠঠোকরা
Himalayan Flameback
Dinopium shorii
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশে এই প্রজাতির কাঠঠোকরা অত্যন্ত বিরল। হিমালয় অঞ্চলের উচু পাহাড়ি বনে এদের দেখা মেলে, বেশ কয়েক দশক আগে বাংলাদেশে দেখা পাওয়া গিয়েছিলো এবং বাংলাদেশের পাখির তালিকায় এর নাম উঠেছে। সুন্দরবনে পাওয়া যাওয়া পাতি কাঠঠোকরার সাথে এদের সাদৃশ্য রয়েছে, আর এদের পায়ে সম্ভবত তিনটি করে আঙ্গুল মাত্র।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
লালচে কাঠঠোকরা
Rufous Woodpecker
Micropternus brachyurus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
গাড় খয়েরী রঙ এর এই কাঠঠকরাটি আকারে মাঝারী, সারাদেশেই পাওয়া যায় তবে সংখ্যায় একটু কম। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখিগুলোর কানের কাছে একটি লাল দাগ দেখা যায়। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ঢাকার সাভার থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
থলা-মাথা কাঠঠোকরা
Pale-headed Woodpecker
Gecinulus grantia
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
ছোট আকারের খুব লাজুক এবং বিরল এই প্রজাতির কাঠঠোকরার মাথার উপরে ফ্যাকাসে হলুদাভ রঙ দেখা যায়। আমাদের দেশে একে শুধুমাত্র চট্বগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনেই দেখা যায়/যেত, সিলেট বিভাগে অনেকদিন দেখা যায়নি তবে সম্প্রতি মৌলভিবাজারের এক বনে দেখা মিলেছে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
পাতি কাঠঠোকরা
Common Flameback
Dinopium javanense
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির কাঠঠোকরা আমাদের দেশে বেশ দুর্লভ, শুধুমাত্র সুন্দরবনে এদের দেখা মেলে, আর কোথাও নয়। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
বাংলা কাঠঠোকরা
Black-rumped Flameback
Dinopium benghalense
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আমাদের দেশের অত্যন্ত সুলভ এই কাঠঠোকরাটিকে সারাদেশের সকল প্রতিবেশে দেখা মেলে। সাধারনত একটি বা কয়েকটি পাখিকে একত্রে দেখা যায়। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতক্ষীরায়।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
ছোট হলদে-সিথি কাঠঠোকরা
Lesser Yellownape
Picus chlorolophus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির কাঠঠোকরা আমাদের দেশের প্রায় সকল ধরনের বনেই বাস করে। সিলেট, চট্বগ্রাম বিভাগের বনে সহ সুন্দরবনে, শেরপুরের গারো পাহাড়ে রয়েছে। রাজশাহী শহরেও একবার দেখা গিয়েছিলো। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম গারো পাহাড় থেকে। এদের কানের কাছে হলদে সিঁথির গোঁড়ায় লাল দাগ থাকে যা দেখে সহজেই এদের আলাদা করা যায়।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
ডোরা-গলা কাঠঠোকরা
Streak-throated Woodpecker
Picus xanthopygaeus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির কাঠঠোকরাও আমাদের দেশে বেশ সুলভ, সারাদেশেই এদের দেখা মেলে তবে বাংলা এবং বাতাবি এর চেয়ে কম। সাধারনত জোড়ায় জোড়ায় দেখা মেলে। দেহের উপরিভাগ সবুজ, পুরুষ পাখিগুলোর মাথার উপরে লাল এবং স্ত্রী পাখিগুলোর কালো রঙের পালক থাকে, আর গলার কাছটায় লম্বা লম্বা ডোরা দাগ রয়েছে। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতক্ষীরা থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
ডোরা-বুক কাঠঠোকরা
Streak-breasted Woodpecker
Picus viridanus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির কাঠঠোকরাটি আমাদের দেশে শুধুমাত্র সুন্দরবনে বাস করে। দেহের উপরিভাগ সবুজ, এর গলায় দাগ নেই বরং বুকে লম্বালম্বি ডোরা দাগ রয়েছে, গলার কাছটা গাড় বাদামি রঙ এর হয়। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
মেটে-মাথা কাঠঠোকরা
Grey-headed Woodpecker
Picus canus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এই প্রজাতির কাঠঠোকরাটিকে আমাদের দেশের প্রায় সকল ধরণের বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এদের দেহের উপরিভাগও সবুজ, বুকে বা গলায় কোন দাগ নেই আর মাথা এবং ঘাড় ছাইরঙ্গা। ঘাড়ের কাছে কালো পালক থাকে তাই এর আরেক নাম Black-naped Woodpecker। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতছড়ি বন থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
বড় হলদে-সিথি কাঠঠোকরা
Greater Yellownape
Chrysophlegma flavinucha
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বড় আকারের হলুদ সিঁথি বিশিষ্ট এই কাঠঠোকরাটি আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনে, সুন্দরবনে বেশ সুলভ। সম্প্রতি গারো পাহাড়েও দেখা মিলেছে। প্রাপ্তবয়স্ক পাখিগুলোর গলার দুপাশে বাদামী-সাদা কিছু ছিটে দাগ দেখা যায়। হলুদ চুড়ায় বা আশেপাশে কোন লাল রঙ এর অস্তিত্ব নেই, ফলে সহজেই Lesser Yellownape এর সাথে আলাদা করা যায়। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সাতছড়ি বন থেকে।
বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
পাখিটির ডাক শুনুন
বড় মেটে কাঠঠোকরা
Great Slaty Woodpecker
Mulleripicus pulverulentus
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
এটি বাংলাদেশের বিরল কাঠঠোকরা, আকারে সবগুলর মধ্যে সবচেয়ে বড়, সাধারনত শুধুমাত্র চট্বগ্রাম বিভাগের উচু পাহাড়ি বনে পাওয়া যায়, মাঝেমধ্যে কিছুটা নিচেও নেমে আসে। এদের মাথায় কোন ঝুঁটি নেই, সারাদেহ ছাইরঙ্গা, গালের কাছটায় লালচে রঙ দেখা যায়। চট্বগ্রাম বিভাগের বাইরে সিলেট বিভাগেও বেশ কয়েকবার দেখা গিয়েছে, সম্প্রতি সাতছড়ি বনে দেখা গেছে। রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি থেকে এদের দেখা পেয়েছিলাম সর্বপ্রথম, তবে ছবি তুলতে পারিনি।