চটক বা বাঘেরি

বাংলাদেশে এপর্যন্ত নয় প্রজাতির বান্টিং পাওয়া গেছে।

এর সবগুলোই পরিযায়ী, এবং সবগুলোই নদী/বিল/হাওড় অঞ্চলের সংলগ্ন ঘাস ও নল জাতীয় উদ্ভিদের ঝোপে পাওয়া যায়। এই ধরণের প্রতিবেশ আমাদের দেশে ও বিশ্বের বেশিরভাগ যায়গায় খুব দ্রুত ধ্বংস হচ্ছে ফলে বান্টিংদের অবস্থাও খুব ভালো নেই। নির্বিচারে শিকার করার দরুন হলদে-বুক চটক ইতোমধ্যেই মহাবিপন্নের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়া বান্টিং গুলোর মধ্যে আমি দেখেছি সাত প্রজাতি ও ছবি তুলতে পেরেছি ছয় প্রজাতির। বার্ডারদের কাছে বান্টিং খুবই আকর্ষনীয় এক পাখি।

ঝুটিয়াল চটক

Crested Bunting

Emberiza lathami
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়া বান্টিং গুলোর মধ্যে এটি খুব সুন্দর ও রঙচঙে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে আলাদা, দুজনের মাথায়ই দৃশ্যমান ঝুটি রয়েছে বলেই এমন নাম। বাংলাদেশে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, মৌলভিবাজার এ পাওয়া যায় এবং সম্প্রতি রাজশাহীতে পাওয়া গেছে বেশ কয়েকদিন ধরে। আমিও সেখান থেকে ছবি তুলেছি এর।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
ঝুটিয়াল চটক, রাজশাহী

কালো-মাথা চটক

Black-headed Bunting

Emberiza melanocephala
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

২০১৩ সালের দিকে সুন্দরবন থেকে এটি প্রথম বাংলাদেশের পাখির তালিকায় যোগ হয় এবং এরপর  কবছর খুব বেশি সাইটিং ছিলোনা এর। সুন্দরবন, বরিশাল, মৌলভিবাজার, ঢাকা, ফরীদপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, শেরপুর সহ সাম্প্রতিককালে কয়েক বছরে একে দেশের অনেক যায়গাতেই দেখা যাচ্ছে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে আলাদা, প্রজননঋতুতে পুরুষ পাখিটি দেখতে বড়ই সুন্দর হয়। আমি এর ছবি তুলেছি কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলার মাঝামাঝি এক পদ্মার চর থেকে ২০২১ সালের শেষে।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
কালো-মাথা চটক, কুষ্টিয়া

লাল-মাথা চটক

Red-headed Bunting

Emberiza bruniceps
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

এই প্রজাতির চটক বাংলাদেশের পাখির তালিকায় ২০২১ সালের মৌসুমে যুক্ত হয়েছে। পাওয়া যায় পাবনা সংলগ্ন কুষ্টিয়া জেলার পদ্মার এক চরে। পরের বছর আবার এসেছে শুনে আমি ছুটে সেখানে যাই এবং এর ছবি তুলি। পরে অভিজ্ঞ বার্ডারগন এটা রেড-হেডেড হবার পক্ষে মত দেন।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
লাল-মাথা চটক, কুষ্টিয়া

ধুসর-ঘাড় চটক

Grey-necked Bunting

Emberiza buchanani
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

বাংলাদেশের অন্যতম বিরল চটক এই ধুসর-ঘাড় চটক। একে সর্বপ্রথম হবিগঞ্জ জেলায় পাওয়া গেছিলো। এরপরে মৌলভিবাজারে আর সুন্দরবনের কটকায় পাওয়া গেছে। দেশে তাই এর সাইটিং হাতেগোনা, খুব বেশি বার্ডারের ঝুলিতে এই চটকটি নেই। আমিও এটিকে এখনো দেখিনি।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এখনো দেখা পাইনি

লাল-কান চটক

Chestnut-eared Bunting

Emberiza fucata
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

 সারা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাওয়া বান্টিং সম্ভবত এটি। একে মৌলভিবাজার, মুন্সিগঞ্জ, রাজশাহী, শেরপুর, বরিশাল এ নিয়মিত পাওয়া যায়। এই পাখিটি সংখ্যায়ও বেশি থাকে সাধারনত। কানের কাছে একটুকরো লাল ছোপ এর কারনে এর এমন নাম। উড়লে লেজের সাদা পালক দৃশ্যমান হয় যা দেখে সহজেই দূর থেকেও একে চেনা যায়। আমি মৌলভিবাজার এর এক ঘাসবন এ প্রথম এর ছবি তুলি, এরপরে সেখানে বেশ কয়েকবার তুলি, এবং ২০২২ মৌসুমে শেরপুর ও রাজশাহী থেকেও এর ছবি পেয়েছি।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
লাল-কান চটক, মৌলভিবাজার

হলদে-বুক চটক

Yellow-breasted Bunting

Emberiza aureola
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

আগে সংখ্যায় বেশ অনেক থাকলেও পূর্ব এশিয়ায় ব্যপকহারে শিকার হওয়ায় গত শতাব্দিতে এই হলদে-বুক চটক মহাবিপন্ন এর তালিকায় নাম লিখিয়েছে। পুরুষ ও স্ত্রী দুই পাখিরই বুক হলুদ হয় এবং প্রজননঋতুতে যেন টসটস করে। পুরুষ পাখিগুলো তখন দেখতে সুন্দর লাগে। আমি প্রথম এর দেখা পাই ২০১৯ সালে ঢাকার অদূরে কেরানিগঞ্জের এক ধানক্ষেতের ধারে, মুনিয়া ও বাবুই এর ঝাঁকে মিশে ছিল। পরবর্তীতে শেরপুর ও রাজশাহীতেও এর দেখা ও ছবি তোলার সুযোগ হয়েছে। সম্প্রতি এটিকে মুন্সিগঞ্জ এর পদ্মার চরেও পাওয়া গেছে। 

বিশ্বে মহাবিপন্ন
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
হলদে-বুক চটক, ঢাকা

ছোট চটক

Little Bunting

Emberiza pusilla
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

নামেই বুঝতে পারছেন এর আকার ছোট। খুব সুন্দর দেখতে এই চটকটি আমাকে বেশ কয়েকবার ঘুরিয়েছে। নিয়মিত পাওয়া যায় এমন কয়েকটি যায়গায় গিয়েও এর দেখা পাইনি, সম্প্রতি শেরপুরে দেখতে পেয়েছিলাম কিন্তু ছবি তুলতে পারিনি। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাখিগুলো খুব সুন্দর দেখতে হয়। বাংলাদেশে মৌলভিবাজারের বাইরে শেরপুর, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, মেহেরপুর ও রাঙামাটিতে একে দেখা পাওয়া গেছে গত কয়েক বছরে।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
দেখেছি, ছবি তুলতে পারিনি

কালো-মুখ চটক

Black-faced Bunting

Emberiza spodocephala
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড় এলাকায় এই পাখিটিকে নিয়মিত দেখা যায়। প্রজননকালে পুরুষ পাখিগুলোর মাথা কালচে আকার ধারন করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির পেট সবুজাভ হলুদ। মৌলভিবাজারে আমি একবারই একে দেখেছিলাম, একটি স্ত্রী পাখির, খুব ভালো ছবি পাইনি। এছাড়া দেশের কিছু স্থানে এর দেখা মিলেছে। 

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
কালো-মুখ চটক, মৌলভিবাজার

ত্রিস্ত্রামের চটক

Tristram's Bunting

Emberiza tristrami
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী

বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়া বিরলতম চটক হচ্ছে এটি। হবিগঞ্জে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশে মরহুমা তানিয়া খান একবারই এর ছবি পেয়েছিলেন। সেটাই বাংলাদেশে এর একমাত্র সাইটিং।

বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
এখনো দেখা পাইনি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top