ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় সুন্দরবন আগস্ট ২০২৩

ট্রিপ রিপোর্ট - বর্ষায় সুন্দরবন আগস্ট ২০২৩

গত ২৫শে আগস্ট আমরা ০৭ জন গিয়েছিলাম সুন্দরবনের করমজলে বনের পাখি দেখা ও ছবি তোলার জন্য। আমাদের যাবার কথা ছিলো মোট আটজনের, যার মধ্যে ছয়জন গেস্ট ও দুজন গাইড। একেবারে শেষমুহুর্তে মানে বাস ছাড়ার পরে একজন গেস্ট তার জরূরী কাজ পড়ে যাওয়ায় ক্যান্সেল করেন তাই আমরা সাতজনই চললাম সুন্দরবনের করমজল। মংলা পৌছলাম ভোর ছয়টার ভেতর, হোটেল পশুর এ ফ্রেশ হয়ে আমরা মাঝি সাহেবকে নিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। বেলা বাড়ার পরপর বৃষ্টি হবার পূর্বাভাস ছিলো কিন্তু আমরা নাস্তা করতে করতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল এবং চলতে থাকলো। ঘন্টাখানেক পরে একটু কমলে আমরা করমজলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, তবে বৃষ্টির কারনে বোটের ছাদের নিচেই থাকতে হল। নদীতে কিছু দেখা গেলোনা।

করমজল পৌছে আমরা টিকিট করে ফেললাম, তবে বৃষ্টি একটানা পড়ছিলো। টিকিট ঘরের পাশেই পেয়ে গেলাম সাদা-ঘাড় মাছরাঙা আর একজোড়া তিলা নাগ ঈগল। বৃষ্টির কারনে আমরা ট্রেইল এক্সিট পয়েন্টের পাশে একটা ছাউনির নিচে অবস্থান নেই এবং বৃষ্টি একটু কমলেই ট্রেইলে কিছুদূর গিয়ে পাখি খুজছিলাম, সুযোগ থাকলে ছবি তুলছিলাম, আবার বৃষ্টি বাড়লে ফেরত আসছিলাম। এ যেন প্রকৃতির সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়া। ট্রেইলে ঢুকতেই কানে এল প্যারা শুমচা আর লাল মাছরাঙার ডাক, কিন্তু দেখা পেলাম না। ছবি তোলা হল ডোরা-বুক কাঠঠোকরা, বড় র‍্যাকেটফিঙে, কালো-কপাল বনমালী সহ কিছু পাখির। 

এরমধ্যে বৃষ্টি আবার এত জোরে নামলো যে মনে হচ্ছিলো আজকে বার্ডিং বুঝি পন্ড হতে চলেছে। আমরা সবাই বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মাথায় ক্যামেরায় পলিথিন/গামছা জড়িয়ে টাওয়ার পর্যন্ত গেলাম ও টাওয়ারে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। সেখান থেকে চোখে পড়লো সিঁদুরে মৌটুসী, ছোট বক, বড় কাঠঠোকরা ইত্যাদি। বৃষ্টি কমলে আবারও আমরা বেরিয়ে পড়লাম এবং ট্রেইল ধরে আবার শুরুতে চলে আসি। এখানে সুন্দরবনের বড় ম্যাপ, ডলফিন ও তিমির জাদুঘর জাতীয় প্রদর্শনি, কুমির ও হরিন প্রজননকেন্দ্র রয়েছে সেগুলো দেখলাম। বানর বেশ বিরক্ত করছিলো, খাবারের খোঁজে আশেপাশে হানা দিচ্ছিলো। 

ট্রেইল থেকে আমরা এরমধ্যে দেখা পেয়েছি বুনো হরিন, রামগদি গুইসাপ, হরেক রকম কাকড়া, মাডস্কিপার মাছ ইত্যাদির। 

আমরা আরও কয়েকবার ট্রেইল চক্কর দেবো ঠিক করলাম, বৃষ্টিতেই বেশ ঝুকি নিয়ে গেলাম, কয়েকজন ছাউনির নিচে রয়ে গেলেন। আমরা একটা ছোট পাখির ঝাঁক পেয়ে যাই তাতে ছিলো ছোট সাহেলী, শেতাক্ষী, তিলা কুটিকুড়ালী, কমলা-পেট ফুলঝুরী, মেটে-টুপি বামন কাঠঠোকরা, কালো-কপাল বনমালী সহ অন্যান্য মৌটুসি ও ফুলঝুরিরা। খবর শুনে পেছনে রয়ে যাওয়া কয়েকজনও এসে যোগ দিলেন কিন্তু ততক্ষনে বৃষ্টি আবার ধেয়ে নামছে। 

আমার ক্যামেরায় পানি ঢুকে গেছিলো একটু, অন হচ্ছিলোনা। আমাদের খাবার চলে আসায় আমরা বোটে ফিরে বোটের ভেতরে বসে ভরপেট খেয়ে নিলাম এবং শেষ আরেক চক্কর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছিলো, তবে সারাদিনে মাছরাঙাদের দিক থেকে দিনটা ফ্লপ ছিলো তাই আমাদের সবার মন খারাপ। প্যারা শুমচার দেখাও পেলাম না শুধু ডাকই শুনলাম। বেশ কিছুদূর গিয়ে ফিরে আসার সময় পেলাম এবটের ছাতারে ও চুনি-গাল মৌটুসী। একেবারে শেষমুহুর্তে হঠাত শুনি প্যারা শুমচা ডাকা শুরু করেছে তাও কয়েকটা একসাথে। লাল মাছরাঙার ডাকও শোনা গেল কয়েকবার। বেশ খোজাখুজি করে প্যারা শুমচা একটাকে স্পট করা গেলো এবং সবাই দেখলেন ছবি তুললেন। লাল মাছরাঙাটা সেদিন অধরাই রয়ে গেলো। 

যাহোক আমরা ঘাটে আসলাম এবং বটে চড়ে বসে ফিরতি রওনা দিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কম থাকায় ছাদে বসেই ফিরতে পারলাম। নদীতে অল্প সময়ের জন্য দেখা গেলো শুশুক এর। ট্রিপটি আশানুরুপ সফল হয়নি তবে আমরা সবাই বেশ কিছু নতুন পাখি দেখা ও ছবি তোলার অভিজ্ঞতা সহ এডভেঞ্চারাস একটি ট্রিপ শেষ করলাম। বাস স্ট্যান্ডে ফিরে আমরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং রাত বারোটার আগেই বাসায় পৌছে যাই নিরাপদে। 

আমাদের টার্গেট স্পিশিজের ভেতরে প্রায় ৭০% এর আমরা দেখা পেয়েছিলাম। আবহাওয়া ভালো থাকলে হয়তো আরও কিছু দেখা যেতো। আমরা মংলা ও করমজল মিলিয়ে ৫৫ প্রজাতির পাখি দেখেছিলাম সেদিন। 

এই লিংকে দেখুন সেদিনের ইবার্ড চেকলিস্টঃ https://ebird.org/checklist/S148037355 

টার্গেট পাখির প্রজাতিঃ

১. কালো-কপাল বনমালি ২. দাগি কুটিকুড়ালি ৩. ডোরাবুক কাঠঠোকরা ৪. পাতি কাঠঠোকরা ৫. ৬. বড় ও ছোট হলদেসিথি কাঠঠোকরা ৭. লালচে মাছরাঙা ৮. বাদামী ডানা মাছরাঙা ৯. নীলকান মাছরাঙা ১০. সাদা-ঘাড় মাছরাঙা ১১. প্যারা শুমচা ১২. কমলা-পেট ফুলঝুরি ১৩. সিঁদুরে সাহেলি ১৪. সোনা-কপালী হরবোলা ১৫. সিঁদুরে মৌটুসি ১৬. বড় র‍্যাকেট ফিঙে ১৭. ছোট মদনটাক ১৮. ধলাপেট সিন্ধু ঈগল ১৯. মেটে-টুপি বামন কাঠঠোকরা ২০. মেটে-বুক ঝিল্লি ইত্যাদি।

এছাড়াও দেখবো/খুজবো সুন্দরবনের মায়া হরিন, লাল বানর, রামগদি গুইসাপ, পশুর নদীতে ডলফিন সহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণী।

1 thought on “ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় সুন্দরবন আগস্ট ২০২৩”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top