অক্টোবর বিগ ডে ২০২৩ এ চট্বগ্রামে পাহাড়ি বন ও ঘাসবনের পাখির খোঁজে

ঢাকা থেকে আমরা বেশ কয়েকজন পাখিয়াল ১২ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে চট্বগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করি। মাঝে করেরহাট নামে একটা স্থানে বিরতি দিয়ে ছিলাম। ঘন কুয়াশায় আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে যেতে আমাদের বেশ এডভেঞ্চার লাগছিলো। হেয়কো বাজারে নাস্তা করার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু কোনো হোটেল খোলা পাইনি। আমরা ভোর ৪ঃ১৫ তে হাজারিখিল পৌঁছে যাই, সেখানে গাড়িতে আমরা কয়েকজন রেস্ট নেই বাহিরে বেশ কুয়াশা ছিলো। তারপর কিছুটা আলো ফোটার পরে আমড়া বনের ভিতর ঢুকতে শুরু করি। প্রথমে আমরা চা বাগানে প্রবেশ করি ছড়া পাড় হয়ে কিছুটা আগাতেই বেশ কিছু পাখির ডাকাডাকি শুনতে থাকি, দুই জোড়া বড় হলদেপিঠ কাঠঠোকরা দেখা পাই কি সুন্দর ডিস্প্লে করছিলো তারপর একে একে বাংলা কাঠঠোকরা, নীলকন্ঠ, কালাঘাড় বেনেবউ, ছোট সোহেলি দেখি, কিছুটা আগাতেই আমরা দেখা পাই মথুরা, একটু দূর থেকে ছবি তুলে সামনে এগোতে থাকি আমাদের সামনে থেকে একটা পাখি লাফ দিয়ে চা গাছের ভিতরে ঢুকে গেলো আর সেটি ছিলো নীলঘাড় শুমচা যদিও কেউ ছবি তুলতে পারিনি।চা বাগান থেকে ফেরার পথে বন মোরগ, তুর্কি বাজ, বসরা শিকরে, তিলানাগ ঈগল এর দেখা পেলাম। এছাড়া পরে ছবি চেক করে দেখা গেল গ্রুপের একজন অতিবিরল কাক-ঠুটি ফিঙের ছবি তুলেছেন, 

চা বাগান থেকে বের হয়ে একটা ছাউনিতে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে অন্ধকার ট্রেইলে ঢুকলাম এই ট্রেইলের শেষে একটা পাড়া আছে। এই ট্রেইলে পেলাম ছোট মাকড়মার, সাদাগলা লেজনাচানি, সিন্দুরে মৌটুসি, ব্রোঞ্জ ফিঙে।

এরপর ঝর্ণা ট্রেইলে দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম । ছড়াতে নেমে সবাই খুব আনন্দ পেয়েছে সাথে এডভেঞ্চার ফিল তো আছেই। ট্রেইলে হেটে হেটে আমরা মথুরা, ঝুটিয়াল গোদাশিকরে, কালোপিঠ চেরালেজ, বেশকিছু ছোট পাখি দেখতে দেখতে ট্রেইল থেকে বের হলাম। হাতে সময় থাকায় আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পাহাড়ের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে শুরু করি , কিসুটা উঠার পর একটু বিশ্রাম নেই তখন বড় বনলাটোরা, সাদাগলা বুলবুলি, সাদা ভ্রু কুটিকুড়ালি পেয়ে যাই। আমাদের টার্গেট ছিলো লালমাথা কুচকুচি, সবুজতাউড়া দেখার, তোলার কিন্তু পেলাম না। এরপর আমরা পাহাড় বেয়ে নেমে আসি নিচে তারপর আমরা ঘাসবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই।

বিকেল বেলা সেখানে প্রচুর দর্শনার্থীর উপস্থিতি থাকায় হলদে-পেট প্রিনিয়ার দেখা পাওয়া যায়নি। তাই সন্ধ্যার পরপর সবাই মিলে চট্বগ্রামের একটি বিখ্যাত মেজবানি গোশতের রেস্টুরেন্টে যেইয়ে ভরপেট খাওয়াদাওয়া করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সকলেই কমবেশি নতুন পাখির দেখা পেয়েছিলো সেদিন। তবে বিকেলের প্রিনিয়ার দেখা না পেয়ে সবার মন একটু খারাপই ছিলো। মাঝরাত নাগাদ সবাইকে গাড়ি তাদের বাসার কাছে নামিয়ে দেয়। 

হাজারিখিলের ভেতরে পাহাড়ি ছড়ায়
হাজারিখিল বনের শুরুতে চা বাগানে বার্ডিংরত অবস্থায় সবাই

টার্গেট পাখির প্রজাতি (সবগুলোর দেখা পাওয়া নিশ্চিত নয়): 

  • লাল বনমোরগ 
  • মথুরা
  • সবুজ তাউরা 
  • কয়েক ধরনের পেঙ্গা/লাগিংথ্রাশ
  • বিভিন্ন ধরনের বুলবুল, বিশেষ করে জলপাইরং বুলবুল ও ছাইরঙা বুলবুল
  • বিভিন্ন জাতের হরিয়াল ও ঘুঘু
  • কয়েক প্রজাতির দুর্লভ ছাতারে ও কাস্তে ছাতারে
  • বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও পরিযায়ী চুটকি ও ফুটকি
  • পাহাড়ি বনের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি
  • বিভিন্ন প্রজাতির মৌটুসী, মাকড়মার ও ফুলঝুরী
  • বিভিন্ন প্রজাতির টিয়ে
  • বিভিন্ন প্রজাতির ফিঙে ও হরবোলা ইত্যাদি
  • দুই থেকে তিন প্রজাতির প্রিনিয়া, বিশেষ করে হলদে-পেট প্রিনিয়া
  • এগুলো সহ আশা করা যায় সারাদিনে ৭৫-৮০ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যাবে। 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top