রাত এগারোটার পরপর আমাদের ট্রিপ শুরু হয়। শেষমুহুর্তে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারনে একজন ট্রিপ মিস করলেন ফলে আমরা ৭ জনের টিম রওনা দিলাম। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চড়া হয়ে গেল অনেকের এই উপলক্ষ্যে। যাবার সময় আমরা গিয়েছিলাম টাংগাইল-মধুপুর-ধনবাড়ি র্যুট ধরে, বেশ কয়েকবার বিরতি দিয়ে এগোনোয় আমাদের পৌছতে পৌছতে সকাল হয়ে গেলো। শেরপুর শহর থেকে আমরা পরোটা-রুটি- ডিমভাজি-ডাল-মিষ্টি সহকারে নাস্তা সেরে রওনা দিলাম প্রথম গন্তব্যে। সেখানে পৌছে মাত্র মিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা প্রথম ধলা-তলা শালিকের দেখা পেলাম তবে সবাই ছবি পেলেন না। আমরা আশেপাশের রাস্তা ধরে বিল ও মাঠগুলো খুজে দেখলাম, বিশেষ করে গবাদী পশুর আশেপাশে এই শালিক বেশি থাকে। বেশ কিছুক্ষন খোঁজার পরে পেয়ে গেলাম এবং এবার সবাই ছবি পেলেন। এরপরে প্রথম যায়গায় আবারও পাই এবং আরেক দফা ছবি হলো। এই বিলে আমরা আরও পেয়েছিলাম অম্বর চুটকি, খুড়ুলে পেঁচা, বড় পানকৌড়ি, মেটে-মাথা কূড়া ঈগল, কয়েক ঝাঁক উড়ন্ত তিলি হাঁস সব সাধারন বিভিন্ন ছোট পাখি।
এরপরে আমরা গিয়ে পৌছালাম আমাদের গারো পাহাড়ের স্পটে, সেখানে গাড়ি রেখে আমরা হেটে বনে প্রবেশ করলাম। প্রবেশের মুখের যায়গাটা বড্ড ভালো লাগে আমার। প্রথমেই পেলাম কালো-ঝুটি বুলবুল, কালো-ঘাড় রাজন ও তাইগা চুটকি। এছাড়া প্রচুর ধরণের প্রজাপতির দেখা মিলছিলো তবে পাখির ডাকাডাকি উপস্থিতি কমই মনে হলো। লাল মাটি ও শালবনের এই জঙ্গলে আমরা ঝোপঝাড় ও ছড়ার আশেপাশে বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুরে বেড়ালাম। দেখা পেলাম মালাপেঙ্গার একটি মিশ্র ঝাঁক, এশীয় ডোরা পেঁচা, সবুজাভ ও সবুজ-চাদি ফুটকি, বড় কাঠঠোকরা, মধুবাজ সহ বিভিন্ন পাখির। ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন সবাই, আকাশ মেঘলা হওয়ায় বৃষ্টি হয় কিনা ভেবে। ফেরার পথে ক্ষুদে খাটোডানার গান শুনলাম সবাই বেশ কয়েকবার তবে বেটাকে স্পট করাই গেলোনা। সম্ভবত দুইটি ছিলো।
এছাড়া মেটে-পেট টেসিয়া আর কালো-গলা টূনটুনির ডাকও বোধহয় শুনেছি। তবে বেশিরভাগ পাখিই ভালোভাবে দেখা দেয়নি সেদিন। গাড়ির কাছে এসে নাস্তা করার সময় একটি তিশাবাজকে উড়তে দেখে মন ভালো হয়ে গেলো, সাদা-চোখ তিশাবাজ, যা গ্রুপের অনেকের জন্যই নতুন ছিলো। এছাড়া একজন এক ফাকে একটি শিকারী পাখি তুললেন যা পরে দেখা গেল ছিল একটা বসরা শিকরে, অইটা সবার জন্যই নতুন পাখি হত। কি বিশাল মিস।
এছাড়া ইন্দোচাইনিজ নীলকন্ঠও তুললেন কয়েকজন।
শহরে একটানা চালিয়ে ফিরে এসে আমরা শেরপুর বার্ড কনজারভেশান সোসাইটির সভাপতি সুজয়দা ও কয়েকজন সদস্যের সাথে দেখা করলাম। তারা উপহার দিলেন তাদের প্রকাশিত কয়েক খন্ড করে ত্রৈমাসিক পত্রিকার কপি। দিনের আলো আরও ছিলো তাই আমরা শহরের পাশের একটি বিলে যাই, সেখানে গতবছর বেশ কিছু বান্টিং ও ঝাড়ফুটকি দেখা মিলেছিলো। তবে আগের দুদিন বৃষ্টি হওয়ায় সবকিছু কর্দমাক্ত থাকায় আমরা খুব ভালোভাবে ঘুরে দেখতে পেলাম না। পালাসি ফড়িং ফুটকি ডাকলো ও দেখা দিলো কিন্তু ছবির সুযোগ দেয়নি, কোন বান্টিং চোখে পড়েনি আমাদের। দূর দিয়ে একটি কাপাসি উড়ে বেড়াচ্ছিলো, সম্ভবত মুরগী কাপাসীর স্ত্রী পাখি। আমরা ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম।
আমরা শেরপুরের বিখ্যাত মান্নান হোটেল এ গিয়ে খাসির ভুনা খিচুড়ি, গরুর কালাভূনা সহকারে জম্পেশ খাওয়াদাওয়া করলাম। এবং একটানা চালিয়ে মাঝরাত নাগাদ ঢাকায় পৌছলাম, সকলকে তাদের বাসার কাছাকাছি নামিয়ে দিয়ে আমিও ফিরে গেলাম আমার বাসায়। দিনটা মন্দের ভালো ছিলো, প্রধান টার্গেট পাওয়া গেলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি গারো পাহাড়ে আরও বেশি পাখি পাবো আশা করেছিলাম, যাইহোক।
টার্গেট পাখি (যা যা পাওয়া গেছে)ঃ
- Great Myna (সাদা-তলা শালিক)
- Eurasian Tree Sparrow (ইউরেশীয় গাছ চড়ুই)
- Pale-blue Flycatcher (ধুসর নীল চুটকি)
- Little Pied Flycatcher (ছোট পাকড়া চুটকি)
- Siberian Blue Robin (সাইবেরীয় নীল দোয়েল)
- White-tailed Robin (সাদা-লেজ দোয়েল)
- Greater necklaced Laughingthrush (বড় মালাপেঙ্গা)
- Lesser Necklaced Laughingthrush (ছোট মালাপেঙ্গা)
- Rufous-necked Laughingthrush (লাল-ঘাড় মালাপেঙ্গা)
- Common Green Magpie (সবুজ তাউরা)
- Lesser Shortwing (ক্ষুদে খাটোডানা)
- Asian Barred Owlet
- Crested Goshawk (ঝুটিয়াল গোদাশিকরে)
- Black Baza (কালো বাজ)
- White-eyed Buzzard (সাদা-চোখ তিশাবাজ)
- Besra
- Harrier Sp.