নভেম্বরের ১০-১১-১২ তারিখ সুন্দরবনে মংলা টু মংলা বার্ডিং ট্রিপ

গত কয়েক মাসে বার্ডিংবিডি এর আয়োজনে সুন্দরবনে একাধিক ট্রিপ আয়োজন হয়ে থাকলেও এবার নভেম্বরের ১০-১১-১২ তারিখে হতে যাচ্ছে একটি তিনদিনব্যাপী ট্রিপ, যাতে একটি মাঝারী সাইজের বোটে করে আমরা মংলা থেকে রওনা হয়ে পূর্ব সুন্দরবন অভয়ারণ্যের পাখির জন্য বিখ্যাত বেশ কিছু স্থান ভ্রমণ করবো, বার্ডওয়াচিং করবো এবং ছবি তুলবো। রাতে শিপেই ঘুমাবো এবং সকাল-বিকেল ছোট নৌকায় করে চিকন খালে ঢুকবো, কাঠের ট্রেইল ধরে ঢুকে যাবো বনের ভেতরে, পায়ে হেটে সুন্দরবনের ভেতরে অনেকটা এলাকা বেড়াবো, দেখবো সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপাঞ্চল যেখানে বনের পাখি ছাড়াও ঘাসবন ও সৈকতের পাখিদের সাথেও দেখা হবে। তিনদিনে নয় বেলা ভারী খাবারের সাথে থাকবে প্রতিদিন দুইবেলা করে হালকা নাশতা ও চা-কফি। এই অঞ্চলের বিখ্যাত মাছের বিভিন্ন ডিশ, চুইঝাল দিয়ে গোশত ভূনা, বারবিকিউ, দই মিষ্টি সহ অনেক কিছু। এক কথায় সুন্দরবনকে তিনদিনে ভরপূর উপভোগ করার চেষ্টা করবো এবং রসনাবিলাস করবো। ইতোমধ্যেই ১৮ বেড বিশিষ্ট নন-এসি মাঝারি শিপ কনফার্ম করা হয়েছে, সম্ভাব্য র‍্যুটও ঠিক করা হয়েছে। ১৬-১৭ জন বার্ডার আমাদের সাথে যোগ দিতে পারবেন, সাথে থাকবেন দুজন অভিজ্ঞ হোস্ট ও গাইড।  

থাকার ব্যবস্থা ও রেজিস্ট্রেশান ফীঃ 

  • (Already BOOKED) একরুমে দুজন টুইন সিংগেল বেড – দুইজন (উপর তলা) – জনপ্রতি ১৪০০০ টাকা (Twin1-2) 
  • (Already BOOKED) একরুমে ডাবল বেড – দুইজন (উপর তলা) – জনপ্রতি ১৪০০০ টাকা (Double1-2)
  • একরুমে চারজন – বাংক টুইন বেড – আটজন (দুইটি রুম, নিচ তলা) – জনপ্রতি ১৩৫০০ টাকা (QuadB 1-8)
  • একরুমে ডাবল + সিংগেল বাংক বেড – তিনজন (নিচ তলা) –  জনপ্রতি ১৩০০০ টাকা (3Bunk 1 + 2-3)
  • একরুমে ট্রিপল বেড – তিনজন (নিচতলা) – জনপ্রতি ১২৫০০ টাকা (3Shared 1-3)

এই খরচ মংলা টু মংলা এর জন্য। ঢাকা থেকে আমাদের সাথে এসি বাসে যেতে ও আসতে চাইলে এই খরচের সাথে আরও ২০০০ টাকা যোগ হবে। 

টয়লেটঃ মোট তিনটি শেয়ার্ড টয়লেট, দুইটি হাই কমোড, একটি লো কমোড। 

বাংলাদেশি নন এমন কেউ যোগ দিতে চাইলে এই রেগুলার ফী এর সাথে ১১০০০ টাকা জনপ্রতি যোগ হবে। এই খরচ মংলা টু মংলা এর জন্য প্রযোজ্য, এর বাইরে ব্যক্তিগত খরচ ছাড়া আর সকল খরচ অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা বা দেশের যেকোন স্থান থেকে ১০ তারিখ ভোর ০৪ঃ৩০ এর মধ্যে মংলায় উপস্থিত থাকতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে আমার সাথে যোগ দিতে চাইলে যেতে পারবেন, আসতে পারবেন, সেক্ষেত্রে এনা বা সোহাগ পরিবহনের ইকোনমি এসি বাসে কাটাখালি হয়ে মংলা যাবো, সুন্দরবনের খরচের সাথে যোগ হবে ২০০০ টাকা জনপ্রতি। নিজ উদ্যোগে মংলা পৌছতে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই চারটা ত্রিশ মিনিটের ভেতরে উপস্থিত থাকতে হবে। নাহলে কয়েকজনের জন্য পুরো টীমকে ওয়েট করতে হবে এবং প্রথম দিনের শিডিউলে ব্যত্যয় ঘটে যাবে যা আমরা কেউ চাইনা। 
 

বুকিংঃ নভেম্বরের ০৫ তারিখের ভেতরে প্রত্যেককে অবশ্যই ১০ (দশ) হাজার টাকা পরিশোধ করে সিট কনফার্ম করতে হবে। বিকাশে পে করতে চাইলে খরচসহ দিতে হবে প্রতি হাজারে পনেরো টাকা যোগ করে। পেমেন্ট মেথড এর জন্য আমার সাথে মেসেঞ্জারে বা হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করুন প্লীজ। 

বুকিং এর জন্য সরাসরি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেনঃ 

সেক্ষেত্রেঃ 

A/C Name:  Md Zaber Ansary 

A/C Number: 2050 2670 2021 63400 

Bank: Islami Bank Bangladesh PLC

Branch: Mohammadpur Krishi market 

আর বিকাশে পাঠাতে চাইলেও পারবেন, তবে খরচ সহ দিতে হবেঃ  

Bkash: 01762-164036 (Personal)

বুকিং এর জন্য ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করুন প্লীজ

আমাদের রিজার্ভ করা ১৮ বেড বিশিষ্ট নন-এসি শিপ।

–সম্ভাব্য র‍্যুট– 

প্রথম দিনঃ মংলা থেকে খুব ভোরে শিপে ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা। বন বিভাগের চাঁদপাই অফিস থেকে টিকিট ও ফরমালিটিস সেরে, গার্ডদের উঠিয়ে নিয়ে আমরা প্রথমেই চলে যাবো পক্ষীর খাল। সেখানে কয়েক ঘন্টা ছোট নৌকায় বার্ডিং করবো। এরপরে বোটে ফিরে একটানা দক্ষিণে চলবো। পথে উল্লেখযোগ্য পাখি দেখলে থেমে শিপ থেকে তুলবো। কচিখালি যাবার আগে বিকেলে সুন্দরী বা ছিটে কটকা খালে থামবো এবং বার্ডিং করবো। রাতে আমরা কচিখালিতে স্টেশানের পাশে অবস্থান করবো। এদিন আমাদের টার্গেট থাকবে মদনটাক, ধলা-পেট সিন্ধু ঈগল, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা ও কাঠঠোকরা সহ অন্যান্য পাখি। কালো-মুখ প্যারাপাখি খুজবো বিকেলে। 

দ্বিতীয় দিনঃ খুব ভোরে ছোট বোটে চেপে চলে যাবো আশেপাশের খালে, এরপরে যাব ডিমের চরে তুলবো সৈকতের বিভিন্ন পাখি এবং দেখবো সমুদ্র সৈকত। এরপরে কচিখালিতে স্টেশান অফিসের আশেপাশে হরিনের পালের সাথে দেখা হবে এবং বিশাল ঘাসবনের ভেতর দিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা পায়ে হেটে আমরা চলে যাবো কটকায়। সেখানে আমাদের শিপও গিয়ে পৌছবে, দুপুরের পর থেকে আমরা কটকায় বনের ভেতরে ট্রেইল ধরে ঘুরবো, বিকেলে সুযোগ পেলে খালে প্রবেশ করবো ছোট নৌকা নিয়ে। রাতে অবস্থান শিপেই, তবে শিপ উত্তরে ফিরতি রওনা দেবে। এইদিনে আমাদের টার্গেট থাকবে বড় মোটাহাটু, বড় ও ছোট গুলিন্দা, বহু ধরনের জিরিয়া, বাটান ও চা-পাখি সহ নানা ধরনের সৈকতের পাখি। এছাড়াও খুজবো হলদে-পেট প্রিনিয়া, পরিযায়ী চটক ও ভরত, বিভিন্ন ধরনের শিকারী পাখি এবং বনের পাখি। সকালে ও বিকালে উভয় সময়ে খালে প্রবেশ করে কালো-মুখ প্যারাপাখি ও মেছো পেচা/হুতোম পেঁচার খোজ করবো। 

তৃতীয় দিনঃ শিপ রাতেই অনেকদূর এগিয়ে তাম্বুলবুনিয়ার কাছে অবস্থান করবে এবং ভোরে আমরা চেষ্টা করবো কোনো খালে প্রবেশ করার। এরপরে যাবো আন্ধারমানিক, সেখানে ট্রেইল ধরে বনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন বেড়িয়ে আবারও শিপ চলবে। বিকেলে আমরা করমজলে বার্ডিং করবো এবং সম্ভব হলে ঢ্যাংমারিতে একটি খালে ঢুকবো, চাইলে মাছ ধরা যাবে। সূর্যাস্তের পরে আস্তে আস্তে বোট মংলার দিকে রওনা দিবে এবং এখানে বোটে ডিনার শেষে আমাদের ট্রিপ শেষ হবে। এইদিনে আমাদের প্রধান টার্গেট থাকবে ডোরা বাবুই, সুন্দরী হাঁস, বিভিন্ন শিকারী পাখি সহ নানা ধরনের ছোট ও বড় বনের পাখি। 

টার্গেটের বাইরেও প্রচুর প্রজাতির পাখি আমাদের চোখে পড়বে আশা করি এবং সেগুলো সারপ্রাইজ হিসেবে থাকছে। আশা করছি তিনদিনে ১২০ এর বেশী প্রজাতির পাখি আমাদের চোখে পড়বে। 

নিরাপত্তাঃ নিরাপত্তা আমাদের কাছে ০১ নম্বর গুরুত্বপূর্ন। আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক অস্ত্রধারী দুইজন বন বিভাগের গার্ড থাকবেন। আমরা সবসময় দলবদ্ধভাবে থাকবো। অন্যদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে এমন কোন ঝুকিপূর্ন কাজ অবশ্যই করবো না এবং দলনেতার কথা মেনে চলতে হবে সবসময়। বিপদে আপদে সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

খাবার মেন্যুঃ 

  • গোশত আইটেমঃ গরু, খাসি, হাঁস, কোয়েল, কক ও ব্রয়লার মুরগী
  • মাছ আইটেমঃ ভেটকি, পারসে, ভাঙান, কাইন, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি বা সমমান। 
  • সবজি ও ঘন ডাল, কেওড়ার খাটা টক ডাল
  • সাদা ভাত, পরোটা, পোলাও, ভুনা খিচুড়ি, রুটি ও পাউরুটি  
  • মিষ্টিঃ দই, পেড়া সন্দেশ, সাতক্ষীরার সন্দেশ
  • ডাব, চা-কফি, পিয়াজু, নুডুলস, মৌসুমী ফল, মধু ইত্যাদি 
  • পানীয়ঃ মিনারেল পানি, কোমল পানীয়। 
প্রতিদিন তিনবেলা ভারী খাবার (ডাবল মেনু) , দুইবেলা নাশতা এবং সর্বক্ষণ চা-কফি ও মিনারেল পানি থাকবে। 

ডেকের সামনে কমন ফাঁকা স্পেস ও ডাইনিং এবং ছাদের উপরে ছাউনি করা যেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যাবে চারপাশে। 

টার্গেট পাখির প্রজাতি (সবগুলো পাওয়ার চেষ্টা করবো তবে সব পাওয়া অসম্ভব)- 

সুন্দরবনের সকল স্পেশাল পাখিই আমাদের টার্গেট থাকবে। 

  • বনের পাখির মধ্যেঃ বড় ও ছোট হলদেকুড়ালি, তিলা কুটিকুড়ালি, ডোরা-বুক কাঠঠোকরা, পাতি কাঠঠোকরা, কালো-কপাল বনমালি, প্যারাবন শিসমার, হিমালয়ী পাপিয়া, কমলা-পেট ফুলঝুরি, চুনি-গাল ও সিঁদুরে মৌটুসী, বন খঞ্জনা সহ বিভিন্ন চুটকি ও ফুটকি। 
  • সৈকতের পাখির মধ্যেঃ বড় মোটা-হাটু, ছোট মদনটাক, বিভিন্ন প্রজাতির গাংচিল ও পানচিল, জিরিয়া ও বাটানসহ অন্যান্য। 
  • ঘাসবনের পাখির ভেতরঃ আগুনকন্ঠী, হলদে-পেট প্রিনিয়া, পরিযায়ী চটক, ডোরা বাবুই, বিভিন্ন প্রজাতির ভরত ও তুলিকা সহ বিভিন্ন ঘাসবনের পাখি।
  • নদীর পাখির মধ্যেঃ কালো-মুখ প্যারাপাখি বিশেষভাবে খুজবো, এছাড়া নীল-কান, লাল, বাদামী-ডানা, কালো-টুপি ও সাদা-ঘাড় মাছরাঙা, মেটে-বুক ঝিল্লি, পরিযায়ী বিভিন্ন হাঁস ইত্যাদি। 
  • শিকারী পাখির মধ্যেঃ ধলা-পেট সিন্ধু ঈগল, মেটে মেছো পেঁচা, বাদামী বন পেঁচা, কালচে হুতোম পেঁচা, খাটো-হাটু সাপ ঈগল,  বিভিন্ন পরিযায়ী বাজ ও শাহীন ইত্যাদি। 

এছাড়াও সুলভ ও দুর্লভ বিভিন্ন পাখি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।  

টার্গেট বন্যপ্রাণীঃ 

  • নোনা-পানির কুমির
  • খাটো-নখ ও মসৃণ-চামড়ার ভোদড়। 
  • চিতা বিড়াল
  • মেছো বিড়াল
  • বন বিড়াল
  • ভাগ্যে থাকলে বাঘ মামার দেখা বা উপস্থিতি টের পাওয়া যেতে পারে। 
  • চিত্রা হরিণ 
  • মায়া হরিণ 
  • লাল বানর
  • বিরল এশীয় বামন চিড়িং মাছ
  • বিপন্ন ইরাবতি ডলফিন
  • বিপন্ন গঙা নদীর শুশুক
  • অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের বন ও জলজ বন্যপ্রাণী।

উপরে উল্লেখিত বিষয়ের বাইরে কোন কিছু এই ফী এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। ব্যক্তিগত বিড়ি-সিগারেট-শপিং এর খরচ শতভাগ নিজের। উপরের প্রাইসিং মংলা টু মংলা সুতরাং ঢাকা বা অন্যান্য স্থান থেকে মংলা পৌছনোর খরচ নিজের। 

বিঃদ্রঃ আপনি যদি নিজে সহ আরও দুইজনকে নিয়ে বুকিং দেন তাহলে তিনজনই পাবেন আকর্ষনীয় ডিসকাউন্ট এবং একসাথে থাকার ব্যবস্থা। 

সাথে যা যা নেয়া বাঞ্চনীয়ঃ 

  • নিজস্ব জামা-কাপড় ও গরম কাপড়, গামবুট। সবুজ ও ধুসর এর মধ্যে রঙ হলে ভালো, উজ্জল রঙ, কড়া পারফিউম এড়িয়ে চলা বাঞ্চনীয়, নিরবতা বজায় রাখতে হবে। 
  • ফোন (টেলিটক, রবি সীম হলে ভালো) চার্জার, ক্যামেরা, চার্জার, অতিরিক্ত ব্যাটারী ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি। 
  • রেজিস্ট্রেশান ফী এর বাকি টাকা অবশ্যই তৃতীয়দিন শিপ থেকে মংলায় নামার আগে পরিশোধ করতে হবে। 

সুন্দরবনে অবশ্যই আমরা কোন অপচনশীল দ্রব্য ফেলে আসবো না, সর্বক্ষণ দলনেতার পরামর্শ মত দলবদ্ধ ভাবে থাকবো। সকলের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব রাখবো, যাত্রা শুরুর সময় উপস্থিতির শিডিউল মানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top