admin-zaber

Pelagic Birds Frenzy in Bangladesh after Cyclone Remal – Few welcome Pelagics including a Country Record

Tropical Cyclone Remal just ended on 28th of May, it originated in the indian ocean, entered Bangladesh through Khulna Division and exited Bangladesh over Mymensingh Division. The Whole Country went through severe thunderstorm and torrential rain for few days. Wind speed grew up to 110+ kilometres per hour. From previous experience like Cyclone Amphan back during Covid Lockdown, Birders around the country became wary about possible pelagic sightings around the, speacially ones living near large rivers like Padma, Meghna estuary etc.   This post is a brief summary of the Deep Sea Birds sighted during and after Cyclone Remal passed. First report came of an injured Sooty Tern from Teknaf, Cox’s Bazar taken by Mr. Mahabub Alam. Another sighting of Great Crested Tern came from Barisal district.  Rajshahi Birders went to look for Pelagics in their side of Padma river because there has been several sightings from this part after great cyclones. For Example after Cyclone Amphan, 04 Pelagic birds were recorded from here in one day. Anyway, Mainul Ahsan Shamim, ASM Arif Ul Anam, Kawsar Al Mamoon and Nurul Islam Nur found few Wilson’s Storm Petrels and a young Sooty Tern.  Few Birders from Dhaka went to Rajshahi and started looking for the Petrels and they managed to find six individuals. Nothing interesting the rest of the day except few Pied Avocets.  In the Meantime, one Adult Sooty Tern was photographed from Bhola District in Barisal, not too far from sea. Main Interesting news started coming from Padma River near Dhaka City. Atleast one Wilson’s Storm Petrel, One Bridled Tern and at least one what might be a Jouain’s Petrel which would be a new country record for Bangladesh. Observers are renowned birdwatchers Shahanshah Bappi and Rashedul Karim Rafat. We;ll see what next is found when few more birders go look for more Pelagic birds there. 

Pelagic Birds Frenzy in Bangladesh after Cyclone Remal – Few welcome Pelagics including a Country Record Read More »

গারো পাহাড়ের পাদদেশে উদ্ধার হল প্রাচ্যের তামাটে পেঁচা – এদেশে তৃতীয়বার

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় গারো পাহাড়ের পাদদেশে উদ্ধার হলো অতিবিরল প্রাচ্যের তামাটে পেঁচা। এর আগে বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে একে মাত্র একদুইবার দেখা গেছে। পাখিটিকে উদ্ধারের পরে আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়।

গারো পাহাড়ের পাদদেশে উদ্ধার হল প্রাচ্যের তামাটে পেঁচা – এদেশে তৃতীয়বার Read More »

নভেম্বরের ১০-১১-১২ তারিখ সুন্দরবনে মংলা টু মংলা বার্ডিং ট্রিপ

গত কয়েক মাসে বার্ডিংবিডি এর আয়োজনে সুন্দরবনে একাধিক ট্রিপ আয়োজন হয়ে থাকলেও এবার নভেম্বরের ১০-১১-১২ তারিখে হতে যাচ্ছে একটি তিনদিনব্যাপী ট্রিপ, যাতে একটি মাঝারী সাইজের বোটে করে আমরা মংলা থেকে রওনা হয়ে পূর্ব সুন্দরবন অভয়ারণ্যের পাখির জন্য বিখ্যাত বেশ কিছু স্থান ভ্রমণ করবো, বার্ডওয়াচিং করবো এবং ছবি তুলবো। রাতে শিপেই ঘুমাবো এবং সকাল-বিকেল ছোট নৌকায় করে চিকন খালে ঢুকবো, কাঠের ট্রেইল ধরে ঢুকে যাবো বনের ভেতরে, পায়ে হেটে সুন্দরবনের ভেতরে অনেকটা এলাকা বেড়াবো, দেখবো সমুদ্র সৈকত ও দ্বীপাঞ্চল যেখানে বনের পাখি ছাড়াও ঘাসবন ও সৈকতের পাখিদের সাথেও দেখা হবে। তিনদিনে নয় বেলা ভারী খাবারের সাথে থাকবে প্রতিদিন দুইবেলা করে হালকা নাশতা ও চা-কফি। এই অঞ্চলের বিখ্যাত মাছের বিভিন্ন ডিশ, চুইঝাল দিয়ে গোশত ভূনা, বারবিকিউ, দই মিষ্টি সহ অনেক কিছু। এক কথায় সুন্দরবনকে তিনদিনে ভরপূর উপভোগ করার চেষ্টা করবো এবং রসনাবিলাস করবো। ইতোমধ্যেই ১৮ বেড বিশিষ্ট নন-এসি মাঝারি শিপ কনফার্ম করা হয়েছে, সম্ভাব্য র‍্যুটও ঠিক করা হয়েছে। ১৬-১৭ জন বার্ডার আমাদের সাথে যোগ দিতে পারবেন, সাথে থাকবেন দুজন অভিজ্ঞ হোস্ট ও গাইড।   থাকার ব্যবস্থা ও রেজিস্ট্রেশান ফীঃ  (Already BOOKED) একরুমে দুজন টুইন সিংগেল বেড – দুইজন (উপর তলা) – জনপ্রতি ১৪০০০ টাকা (Twin1-2)  (Already BOOKED) একরুমে ডাবল বেড – দুইজন (উপর তলা) – জনপ্রতি ১৪০০০ টাকা (Double1-2) একরুমে চারজন – বাংক টুইন বেড – আটজন (দুইটি রুম, নিচ তলা) – জনপ্রতি ১৩৫০০ টাকা (QuadB 1-8) একরুমে ডাবল + সিংগেল বাংক বেড – তিনজন (নিচ তলা) –  জনপ্রতি ১৩০০০ টাকা (3Bunk 1 + 2-3) একরুমে ট্রিপল বেড – তিনজন (নিচতলা) – জনপ্রতি ১২৫০০ টাকা (3Shared 1-3) এই খরচ মংলা টু মংলা এর জন্য। ঢাকা থেকে আমাদের সাথে এসি বাসে যেতে ও আসতে চাইলে এই খরচের সাথে আরও ২০০০ টাকা যোগ হবে।  টয়লেটঃ মোট তিনটি শেয়ার্ড টয়লেট, দুইটি হাই কমোড, একটি লো কমোড।  বাংলাদেশি নন এমন কেউ যোগ দিতে চাইলে এই রেগুলার ফী এর সাথে ১১০০০ টাকা জনপ্রতি যোগ হবে। এই খরচ মংলা টু মংলা এর জন্য প্রযোজ্য, এর বাইরে ব্যক্তিগত খরচ ছাড়া আর সকল খরচ অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা বা দেশের যেকোন স্থান থেকে ১০ তারিখ ভোর ০৪ঃ৩০ এর মধ্যে মংলায় উপস্থিত থাকতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে আমার সাথে যোগ দিতে চাইলে যেতে পারবেন, আসতে পারবেন, সেক্ষেত্রে এনা বা সোহাগ পরিবহনের ইকোনমি এসি বাসে কাটাখালি হয়ে মংলা যাবো, সুন্দরবনের খরচের সাথে যোগ হবে ২০০০ টাকা জনপ্রতি। নিজ উদ্যোগে মংলা পৌছতে চাইলে অবশ্যই অবশ্যই চারটা ত্রিশ মিনিটের ভেতরে উপস্থিত থাকতে হবে। নাহলে কয়েকজনের জন্য পুরো টীমকে ওয়েট করতে হবে এবং প্রথম দিনের শিডিউলে ব্যত্যয় ঘটে যাবে যা আমরা কেউ চাইনা।   বুকিংঃ নভেম্বরের ০৫ তারিখের ভেতরে প্রত্যেককে অবশ্যই ১০ (দশ) হাজার টাকা পরিশোধ করে সিট কনফার্ম করতে হবে। বিকাশে পে করতে চাইলে খরচসহ দিতে হবে প্রতি হাজারে পনেরো টাকা যোগ করে। পেমেন্ট মেথড এর জন্য আমার সাথে মেসেঞ্জারে বা হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করুন প্লীজ।  বুকিং এর জন্য সরাসরি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেনঃ  সেক্ষেত্রেঃ  A/C Name:  Md Zaber Ansary  A/C Number: 2050 2670 2021 63400  Bank: Islami Bank Bangladesh PLC Branch: Mohammadpur Krishi market  আর বিকাশে পাঠাতে চাইলেও পারবেন, তবে খরচ সহ দিতে হবেঃ   Bkash: 01762-164036 (Personal) বুকিং এর জন্য ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করুন প্লীজ Facebook Whatsapp আমাদের রিজার্ভ করা ১৮ বেড বিশিষ্ট নন-এসি শিপ। –সম্ভাব্য র‍্যুট–  প্রথম দিনঃ মংলা থেকে খুব ভোরে শিপে ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা। বন বিভাগের চাঁদপাই অফিস থেকে টিকিট ও ফরমালিটিস সেরে, গার্ডদের উঠিয়ে নিয়ে আমরা প্রথমেই চলে যাবো পক্ষীর খাল। সেখানে কয়েক ঘন্টা ছোট নৌকায় বার্ডিং করবো। এরপরে বোটে ফিরে একটানা দক্ষিণে চলবো। পথে উল্লেখযোগ্য পাখি দেখলে থেমে শিপ থেকে তুলবো। কচিখালি যাবার আগে বিকেলে সুন্দরী বা ছিটে কটকা খালে থামবো এবং বার্ডিং করবো। রাতে আমরা কচিখালিতে স্টেশানের পাশে অবস্থান করবো। এদিন আমাদের টার্গেট থাকবে মদনটাক, ধলা-পেট সিন্ধু ঈগল, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা ও কাঠঠোকরা সহ অন্যান্য পাখি। কালো-মুখ প্যারাপাখি খুজবো বিকেলে।  দ্বিতীয় দিনঃ খুব ভোরে ছোট বোটে চেপে চলে যাবো আশেপাশের খালে, এরপরে যাব ডিমের চরে তুলবো সৈকতের বিভিন্ন পাখি এবং দেখবো সমুদ্র সৈকত। এরপরে কচিখালিতে স্টেশান অফিসের আশেপাশে হরিনের পালের সাথে দেখা হবে এবং বিশাল ঘাসবনের ভেতর দিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা পায়ে হেটে আমরা চলে যাবো কটকায়। সেখানে আমাদের শিপও গিয়ে পৌছবে, দুপুরের পর থেকে আমরা কটকায় বনের ভেতরে ট্রেইল ধরে ঘুরবো, বিকেলে সুযোগ পেলে খালে প্রবেশ করবো ছোট নৌকা নিয়ে। রাতে অবস্থান শিপেই, তবে শিপ উত্তরে ফিরতি রওনা দেবে। এইদিনে আমাদের টার্গেট থাকবে বড় মোটাহাটু, বড় ও ছোট গুলিন্দা, বহু ধরনের জিরিয়া, বাটান ও চা-পাখি সহ নানা ধরনের সৈকতের পাখি। এছাড়াও খুজবো হলদে-পেট প্রিনিয়া, পরিযায়ী চটক ও ভরত, বিভিন্ন ধরনের শিকারী পাখি এবং বনের পাখি। সকালে ও বিকালে উভয় সময়ে খালে প্রবেশ করে কালো-মুখ প্যারাপাখি ও মেছো পেচা/হুতোম পেঁচার খোজ করবো।  তৃতীয় দিনঃ শিপ রাতেই অনেকদূর এগিয়ে তাম্বুলবুনিয়ার কাছে অবস্থান করবে এবং ভোরে আমরা চেষ্টা করবো কোনো খালে প্রবেশ করার। এরপরে যাবো আন্ধারমানিক, সেখানে ট্রেইল ধরে বনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন বেড়িয়ে আবারও শিপ চলবে। বিকেলে আমরা করমজলে বার্ডিং করবো এবং সম্ভব হলে ঢ্যাংমারিতে একটি খালে ঢুকবো, চাইলে মাছ ধরা যাবে। সূর্যাস্তের পরে আস্তে আস্তে বোট মংলার দিকে রওনা দিবে এবং এখানে বোটে ডিনার শেষে আমাদের ট্রিপ শেষ হবে। এইদিনে আমাদের প্রধান টার্গেট থাকবে ডোরা বাবুই, সুন্দরী হাঁস, বিভিন্ন শিকারী পাখি সহ নানা ধরনের ছোট ও বড় বনের পাখি।  টার্গেটের বাইরেও প্রচুর প্রজাতির পাখি আমাদের চোখে পড়বে আশা করি এবং সেগুলো সারপ্রাইজ হিসেবে থাকছে। আশা করছি তিনদিনে ১২০ এর বেশী প্রজাতির পাখি আমাদের চোখে পড়বে।  নিরাপত্তাঃ নিরাপত্তা আমাদের কাছে ০১ নম্বর গুরুত্বপূর্ন। আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক অস্ত্রধারী দুইজন বন বিভাগের গার্ড থাকবেন। আমরা সবসময় দলবদ্ধভাবে থাকবো। অন্যদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে এমন কোন ঝুকিপূর্ন কাজ অবশ্যই করবো না এবং দলনেতার কথা মেনে চলতে হবে সবসময়। বিপদে আপদে সকলে মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  খাবার মেন্যুঃ  গোশত আইটেমঃ গরু, খাসি, হাঁস, কোয়েল, কক ও ব্রয়লার মুরগী মাছ আইটেমঃ ভেটকি, পারসে, ভাঙান, কাইন, বাগদা চিংড়ি ইত্যাদি বা সমমান।  সবজি ও ঘন ডাল, কেওড়ার খাটা টক ডাল সাদা ভাত, পরোটা, পোলাও, ভুনা খিচুড়ি, রুটি ও পাউরুটি   মিষ্টিঃ দই, পেড়া সন্দেশ, সাতক্ষীরার সন্দেশ ডাব, চা-কফি, পিয়াজু, নুডুলস, মৌসুমী ফল, মধু ইত্যাদি  পানীয়ঃ মিনারেল পানি, কোমল পানীয়।  প্রতিদিন তিনবেলা ভারী খাবার (ডাবল মেনু) , দুইবেলা নাশতা এবং সর্বক্ষণ চা-কফি ও মিনারেল পানি থাকবে।  ডেকের সামনে কমন ফাঁকা স্পেস ও ডাইনিং এবং ছাদের উপরে ছাউনি করা যেখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যাবে চারপাশে।  টার্গেট পাখির প্রজাতি (সবগুলো পাওয়ার চেষ্টা করবো তবে সব পাওয়া অসম্ভব)-  সুন্দরবনের সকল স্পেশাল পাখিই আমাদের টার্গেট থাকবে।  বনের পাখির মধ্যেঃ বড়

নভেম্বরের ১০-১১-১২ তারিখ সুন্দরবনে মংলা টু মংলা বার্ডিং ট্রিপ Read More »

নদী ও ঘাসবনের পাখির খোঁজে রাজশাহীতে দুদিন – ডিসেম্বর ২০২৩

ডিসেম্বর মাসের ১৫ ও ১৬ তারীখে আমরা ট্রেনযোগে ঢাকা থেকে কয়েকজন ফটোগ্রাফার রওনা দেই রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন, বেশ আধুনিক  ও দ্রুত গতির ট্রেন। তবে আসতে লেট করলো এবং আমাদের প্রায় আলো ফোটার পরে রাজশাহী পৌছে দিলো। আমরা স্টেশানের পাশেই সকালের নাস্তা সেরে অটো যোগে রওনা হয়ে গেলাম ঘাটের উদ্দেশ্যে এবং মাঝিদের সাথে দেখা করে দুইটি ছোট ও মাঝারি বোটে চড়ে বসে যাত্রা শুরু করলাম। রোদ ঝলমল সুন্দর দিন ছিলো।  বেশ কিছুদূর এগিয়ে প্রথম একটি ফাঁকা চরে পেয়ে গেলাম বেশ কিছু খয়েরী চখাচখি, একটি মাটিতে বসা পেরেগ্রীন শাহীন এবং কিছু বড় পানকৌড়ির ও ধুপনি বকের। এছাড়া চরে ইতস্থত ঘুরে বেড়াচ্ছিলো ছোট নথজিরিয়া ও ছোট চাপাখির মত পাখিরা।  বেশ কিছুক্ষন ছবি তুলে আমরা আবারও আগাতে থাকলাম এবং একটি বেশ কর্দমাক্ত চরে আবিস্কার করলাম বিরাট ছোট বাবুবাটানের ঝাঁক, সাথে ছিল প্রচুর ছোট ও টেমিংকের চাপাখি, বাটান ও বেশ কয়েকটি পাকড়া উল্টোঠুটি। সবাই কাছ থেকে খুব ভালো ছবি পেলেন। কয়েকজন সাহস করে কাদায় নেমে আগাতে থাকলাম যাতে বাবুবাটানের ভালো ছবি পাওয়া যায় তবে কাদা খুবই নরম ছিলো এবং কয়েকজন হাটু অব্দি ডুবে গিয়ে আটকে গেলো। রিস্ক হয়ে যায় ভেবে আর না এগিয়ে আমরা সবাই থলথলে নরম কাঁদা মাড়িয়ে আবার বোটে এসে চড়লাম। এই পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে গেছিলাম যারা কাঁদায় ডুবেছিলো বেশি। প্যান্ট ও পা ধুয়ে বোট আবারও যাত্রা শুরু করলো। এরমধ্যে পাওয়া গেলো বড় খোঁপা ডুবুরীর দেখা , সবাই ছবি পেলেন, এরা মস্ত চালাক, এক ডুব দিয়ে এরপরে বেশ কয়েকশো ফুট দুরত্বে গিয়ে আবার মাথা তোলে, অনেকসময় চোখের আড়ালে চলে যায়।   এগোতে এগোতে আমরা আবারও পেয়ে যাই বিশাল একটি খয়েরী চখাচখির ঝাঁক, সাথে ছিলো বেশ কিছু পিয়াং হাঁস। সবাই বেশ ভালো ছবি তুললেন, সূর্যের বিপরিতে ছিলো তারা। রোদ বেশ চড়ে গেছে ততক্ষণে তাই আমরা বেশি না দাঁড়িয়ে একটানা আমাদের গন্তব্যে আগাতে থাকলাম এবং পৌছে গেলাম। পথে এক যায়গায় নদীর ধারেই চাপাখি ও বাটানদের মধ্যে দেখা মিললো ছোট গুলিন্দা বাটানের, এই পাখিটি কমই পাওয়া যায় এবং গ্রুপের প্রায় সবার জন্যই নতুন পাখি ছিলো।  আমাদের গন্তব্যে পৌছে আমরা বোট থেকে নেমে আগে হাল্কা নাস্তা করে নিলাম এবং সবার কাছে নাস্তা দিয়ে দিলাম যাতে ক্ষুধা পেলে খাওয়া যায়। এই চরে কোনো দোকানপাট নেই, অল্প কিছু গরু-মহিষের বাথান রয়েছে শুধুমাত্র। ডিসেম্বর মাস হওয়ায় মাটি বেশ সবুজ ছিলো, গতবছর মার্চ মাসে এসে খটখটে রুক্ষ দেখেছিলাম। কিছুদূর এগিয়েই আমরা পেয়ে গেলাম বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি তামাটে-পিঠ লাটোরার। সবাই সময় নিলে বেশ ভালো ছবি পেলেন। এছাড়া দেখা মিললো এই চরে বাস করা কয়েকটি সাদা-চোখ তিশাবাজ এর। যাদের সাথে আকাশে পাল্লা দিচ্ছিলো পরিযায়ী পাতি কেস্ট্রেল/বাজ। আরও পেলাম দেশী নীলকন্ঠ। হঠাত হঠাত দূর থেকে ডেকে উঠছিলো ধূসর তিতিরের দল। যাদের দেখার জন্যই আমরা এসেছি। উচু নিচু এবড়ো খেবড়ো শক্ত মাটির চরের মধ্যে জন্মানো কাঁটাঝোপে এদের বাস আর মানুষ দেখলেও দৌড়ে পালায়, বেশি কাছে চলে গেলে খুব জোরে উড়ে দূরে চলে যায়। আমরা একটি ঝাঁকে বেশ কিছু তিতিরের দেখা পেলাম, সবাই দূর থেকে ছবি তুলতে পারলেন। ওরা গিয়ে পালালো ভারতের সীমানার ভেতরে, আমাদের মাঝিরা আমাদের সতর্ক করলো যে আর যাতে আমরা না আগাই, কারন এই চরের অর্ধেক পড়েছে ভারতের সীমানার মধ্যে। আমরা দূর থেকে সীমানা পিলারও দেখতে পেলাম। মাঝিদের দেখানো পথে আমরা হাটতে থাকলাম এবং মাঝে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিলাম, ব্যাগে থাকা শুকনো খাবার খেলাম।  বেশ কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়ার পরে আবারও পাখির খোঁজ শুরু, পাওয়া গেল এক ঝাঁক লাল-লতিকা হটিটির, এছাড়া দেখা মিললো দুইটি দেশী মোটাহাটুর, তবে ছবির সুযোগ পাওয়া যায়নি। বাবলা কাটা জাতীয় গাছের মধ্যে ছোট পাখির নড়াচড়া লক্ষ্য করে আমরা পেয়ে গেলাম পাতি চিফচ্যাফ এর। যেটা গ্রুপের অনেকের জন্যই ছিলো নতুন। আমরা খুজছিলাম এই চরে গত কয়েকদিন ধরে পাওয়া যাওয়া বাংলাদেশের বিরল পাখি পাতি ছাতারেদেরকে কিন্তু পাচ্ছিলাম না। ততক্ষনে বিকেল শুরু হয়ে গেছে, সুর্যাস্তের ঘন্টাখানেক আগে আমাদেরকে অবশ্যই রওনা দিতে হবে, অন্ধকারে নদীতে নানা রকম বিপদ আপদের সম্ভাবনা। আকাশে চক্কর মেরে গেলো একটি বুটপা ঈগল আর একটি লম্বা-পা তিশাবাজ। নুরু মাঝির দিকনির্দেশনা মত আমরা গরুর বাথানগুলোর চারপাশে ঘুরে ঘুরে খুজতে থাকলাম এবং পেলাম কালো গির্দি, মোহনচূড়া ইত্যাদি পাখিদের। ইতি উতি ঘুরে বেড়াচ্ছিলো তিন প্রজাতির তুলিকা ও ঝাড়ভরতেরা। নুরু মাঝি হঠাত ডেকে বললো ভাই অইযে পাতি ছাতারে, আশেপাশে খেয়াল করে দেখেন আরও আছে। মনটা আনন্দে ভরে উঠলো কারন গতবছর এর আশায় এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছিলাম, এবার পেলাম। সবাইকে ফোন করে আমার লোকেশানে আসতে বললাম এবং বেশ কিছুক্ষন ঘুরে ঘুরে আমরা সবাই এই পাতি ছাতারের একটি ছোট দলের ছবি নিলাম, ডাক রেকর্ড করলাম। এবার ফিরতি যাত্রার পালা, হঠাত একটি ধূসর তিতিরের বড় ঝাঁকের দেখা মিললো, প্রায় ১০-১২ টি পাখি দৌড়ে ও উড়ে যাচ্ছে দূর দিয়ে। সবাই হামাগুড়ি দিয়ে ও গুড়ি মেরে এগিয়ে কিছুটা কাছে এগিয়ে গিয়ে ছবি নিলেন, সারাদিনের মধ্যে এই ছবিগুলোই ছিলো মানসম্মত। তবে খুব কাছ থেকে নেয়া পোরট্রেট সেদিন হয়নি। ফিরতি পথে চরের পাশ দিয়ে একটি খাড়ির মত তৈরী হয়েছে সেখান এদেখা মিললো নানা ধরণের সৈকতের পাখির। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কালো-মাথা কাস্তেচরা, তিলা লালপা, পাতি সবুজপা, ধূসর জিরিয়া, বিল বাটান, ছোট ও টেমিংকের চাপাখি সব বাবুবাটান, বাটানের ঝাঁক। আমরা নৌকার কাছে ফিরে হাত পা ধুয়ে অবশিষ্ট খাবার খেতে খেতে ফিরতি রওনা শুরু করলাম এবং একটানা চালিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা পরে অন্ধকারের মধ্যে নিরাপদে ঘাটে এসে পৌছলাম। ঘাটে নেমে চা খেয়ে চললাম হোটেলপানে। যার যার রূমে চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে ঘন্টাখানেক পরে বের হলাম রাজশাহী শহর ঘুরে দেখতে এবং ডিনার করতে। বিখ্যাত রহমানিয়া হোটেলে পছন্দমত খাবার দিয়ডীনার করলেন, এবং খেয়ে বেরিয়ে টং দোকান থেকে খেলাম চা। সবাই হোটেলে ফিরে গেলেন ঘুমানোর জন্য।   পরেরদিন সকালে উঠে আমরা হোটেল থেকে সোজা রওনা দিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে। বিজয় দিবস হওয়ায় প্রচুর র‍্যালি যাচ্ছিলো এবং বিকট শব্দে ভুভুজেলা বাজছিলো। ভয় হচ্ছিলো ক্যাম্পাসের টার্গেট পাখিগুলো পাবো তো? প্রথমেই আমরা পেয়ে গেলাম ক্যাম্পাসের প্রাইম টার্গেট ছোট বন পেঁচার। এই পাখিটিকে বাংলাদেশে এই একটি যায়গাতেই দেখা মেলে এবং এই একটি পাখিই রয়েছে। সবাই সময় নিয়ে বেশ ভালো ছবি তুললেন, এরপরে আমরা গেলাম স্টেডিয়ামের পাশে। সেখানে রেস্তোরা মত রয়েছে একটা, তার আশেপাশে শালিকের দল ভীড় জমায়। তার মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি বামুনি কাঠশালিকের দেখা পেয়ে গেলাম। সবাই বেশ ভালো ছবি পেলেন। এছাড়া পাশের পুকুরের উপরে তারে বসা পাওয়া গেল মেঘহও মাছরাঙা। এখানে আমরা সকালের নাশ্তাও সেরে নিলাম এবং রওনা দিলাম ক্যাম্পাসের পেছনের দিকে একটি যায়গায় যেখানে বেশ কিছু পুকুর রয়েছে, পানকৌড়ি, কুড়া ঈগল ইত্যাদি পাওয়া যায়। আমরা গিয়েই পেয়ে গেলাম ছট, দেশী ও বড় এই তিন জাতের পানকৌড়ির দেখা। দেশী পানকৌড়িটি বিরল, গ্রুপের অনেকের জন্যই সেটা নতুন পাখি হল। এছাড়া দেখা মিললো কুড়া ঈগল ও নিশিবকের। ফেরার

নদী ও ঘাসবনের পাখির খোঁজে রাজশাহীতে দুদিন – ডিসেম্বর ২০২৩ Read More »

শেরপুরে জলাভূমি ও গারো পাহাড়ের পাখির খোঁজে – ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩

রাত এগারোটার পরপর আমাদের ট্রিপ শুরু হয়। শেষমুহুর্তে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারনে একজন ট্রিপ মিস করলেন ফলে আমরা ৭ জনের টিম রওনা দিলাম। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চড়া হয়ে গেল অনেকের এই উপলক্ষ্যে। যাবার সময় আমরা গিয়েছিলাম টাংগাইল-মধুপুর-ধনবাড়ি র‍্যুট ধরে, বেশ কয়েকবার বিরতি দিয়ে এগোনোয় আমাদের পৌছতে পৌছতে সকাল হয়ে গেলো। শেরপুর শহর থেকে আমরা পরোটা-রুটি- ডিমভাজি-ডাল-মিষ্টি সহকারে নাস্তা সেরে রওনা দিলাম প্রথম গন্তব্যে। সেখানে পৌছে মাত্র মিনিট দশেকের মধ্যেই আমরা প্রথম ধলা-তলা শালিকের দেখা পেলাম তবে সবাই ছবি পেলেন না। আমরা আশেপাশের রাস্তা ধরে বিল ও মাঠগুলো খুজে দেখলাম, বিশেষ করে গবাদী পশুর আশেপাশে এই শালিক বেশি থাকে। বেশ কিছুক্ষন খোঁজার পরে পেয়ে গেলাম এবং এবার সবাই ছবি পেলেন। এরপরে প্রথম যায়গায় আবারও পাই এবং আরেক দফা ছবি হলো। এই বিলে আমরা আরও পেয়েছিলাম অম্বর চুটকি, খুড়ুলে পেঁচা, বড় পানকৌড়ি, মেটে-মাথা কূড়া ঈগল, কয়েক ঝাঁক উড়ন্ত তিলি হাঁস সব সাধারন বিভিন্ন ছোট পাখি।  এরপরে আমরা গিয়ে পৌছালাম আমাদের গারো পাহাড়ের স্পটে, সেখানে গাড়ি রেখে আমরা হেটে বনে প্রবেশ করলাম। প্রবেশের মুখের যায়গাটা বড্ড ভালো লাগে আমার। প্রথমেই পেলাম কালো-ঝুটি বুলবুল, কালো-ঘাড় রাজন ও তাইগা চুটকি। এছাড়া প্রচুর ধরণের প্রজাপতির দেখা মিলছিলো তবে পাখির ডাকাডাকি উপস্থিতি কমই মনে হলো। লাল মাটি ও শালবনের এই জঙ্গলে আমরা ঝোপঝাড় ও ছড়ার আশেপাশে বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুরে বেড়ালাম। দেখা পেলাম মালাপেঙ্গার একটি মিশ্র ঝাঁক, এশীয় ডোরা পেঁচা, সবুজাভ ও সবুজ-চাদি ফুটকি, বড় কাঠঠোকরা, মধুবাজ সহ বিভিন্ন পাখির। ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন সবাই, আকাশ মেঘলা হওয়ায় বৃষ্টি হয় কিনা ভেবে। ফেরার পথে ক্ষুদে খাটোডানার গান শুনলাম সবাই বেশ কয়েকবার তবে বেটাকে স্পট করাই গেলোনা। সম্ভবত দুইটি ছিলো।  এছাড়া মেটে-পেট টেসিয়া আর কালো-গলা টূনটুনির ডাকও বোধহয় শুনেছি। তবে বেশিরভাগ পাখিই ভালোভাবে দেখা দেয়নি সেদিন। গাড়ির কাছে এসে নাস্তা করার সময় একটি তিশাবাজকে উড়তে দেখে মন ভালো হয়ে গেলো, সাদা-চোখ তিশাবাজ, যা গ্রুপের অনেকের জন্যই নতুন ছিলো। এছাড়া একজন এক ফাকে একটি শিকারী পাখি তুললেন যা পরে দেখা গেল ছিল একটা বসরা শিকরে, অইটা সবার জন্যই নতুন পাখি হত। কি বিশাল মিস।  এছাড়া ইন্দোচাইনিজ নীলকন্ঠও তুললেন কয়েকজন। শহরে একটানা চালিয়ে ফিরে এসে আমরা শেরপুর বার্ড কনজারভেশান সোসাইটির সভাপতি সুজয়দা ও কয়েকজন সদস্যের সাথে দেখা করলাম। তারা উপহার দিলেন তাদের প্রকাশিত কয়েক খন্ড করে ত্রৈমাসিক পত্রিকার কপি। দিনের আলো আরও ছিলো তাই আমরা শহরের পাশের একটি বিলে যাই, সেখানে গতবছর বেশ কিছু বান্টিং ও ঝাড়ফুটকি দেখা মিলেছিলো। তবে আগের দুদিন বৃষ্টি হওয়ায় সবকিছু কর্দমাক্ত থাকায় আমরা খুব ভালোভাবে ঘুরে দেখতে পেলাম না। পালাসি ফড়িং ফুটকি ডাকলো ও দেখা দিলো কিন্তু ছবির সুযোগ দেয়নি, কোন বান্টিং চোখে পড়েনি আমাদের। দূর দিয়ে একটি কাপাসি উড়ে বেড়াচ্ছিলো, সম্ভবত মুরগী কাপাসীর স্ত্রী পাখি। আমরা ফিরতি যাত্রা শুরু করলাম। আমরা শেরপুরের বিখ্যাত মান্নান হোটেল এ গিয়ে খাসির ভুনা খিচুড়ি, গরুর কালাভূনা সহকারে জম্পেশ খাওয়াদাওয়া করলাম। এবং একটানা চালিয়ে মাঝরাত নাগাদ ঢাকায় পৌছলাম, সকলকে তাদের বাসার কাছাকাছি নামিয়ে দিয়ে আমিও ফিরে গেলাম আমার বাসায়। দিনটা মন্দের ভালো ছিলো, প্রধান টার্গেট পাওয়া গেলেও ব্যক্তিগতভাবে আমি গারো পাহাড়ে আরও বেশি পাখি পাবো আশা করেছিলাম, যাইহোক।  টার্গেট পাখি (যা যা পাওয়া গেছে)ঃ Great Myna (সাদা-তলা শালিক)  Eurasian Tree Sparrow (ইউরেশীয় গাছ চড়ুই) Pale-blue Flycatcher (ধুসর নীল চুটকি) Little Pied Flycatcher (ছোট পাকড়া চুটকি) Siberian Blue Robin (সাইবেরীয় নীল দোয়েল) White-tailed Robin (সাদা-লেজ দোয়েল) Greater necklaced Laughingthrush (বড় মালাপেঙ্গা)  Lesser Necklaced Laughingthrush (ছোট মালাপেঙ্গা)  Rufous-necked Laughingthrush (লাল-ঘাড় মালাপেঙ্গা)  Common Green Magpie (সবুজ তাউরা)  Lesser Shortwing (ক্ষুদে খাটোডানা)  Asian Barred Owlet  Crested Goshawk (ঝুটিয়াল গোদাশিকরে) Black Baza (কালো বাজ)  White-eyed Buzzard (সাদা-চোখ তিশাবাজ) Besra Harrier Sp. 

শেরপুরে জলাভূমি ও গারো পাহাড়ের পাখির খোঁজে – ডিসেম্বর ০৮, ২০২৩ Read More »

অক্টোবর বিগ ডে ২০২৩ এ চট্বগ্রামে পাহাড়ি বন ও ঘাসবনের পাখির খোঁজে

ঢাকা থেকে আমরা বেশ কয়েকজন পাখিয়াল ১২ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে চট্বগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করি। মাঝে করেরহাট নামে একটা স্থানে বিরতি দিয়ে ছিলাম। ঘন কুয়াশায় আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে যেতে আমাদের বেশ এডভেঞ্চার লাগছিলো। হেয়কো বাজারে নাস্তা করার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু কোনো হোটেল খোলা পাইনি। আমরা ভোর ৪ঃ১৫ তে হাজারিখিল পৌঁছে যাই, সেখানে গাড়িতে আমরা কয়েকজন রেস্ট নেই বাহিরে বেশ কুয়াশা ছিলো। তারপর কিছুটা আলো ফোটার পরে আমড়া বনের ভিতর ঢুকতে শুরু করি। প্রথমে আমরা চা বাগানে প্রবেশ করি ছড়া পাড় হয়ে কিছুটা আগাতেই বেশ কিছু পাখির ডাকাডাকি শুনতে থাকি, দুই জোড়া বড় হলদেপিঠ কাঠঠোকরা দেখা পাই কি সুন্দর ডিস্প্লে করছিলো তারপর একে একে বাংলা কাঠঠোকরা, নীলকন্ঠ, কালাঘাড় বেনেবউ, ছোট সোহেলি দেখি, কিছুটা আগাতেই আমরা দেখা পাই মথুরা, একটু দূর থেকে ছবি তুলে সামনে এগোতে থাকি আমাদের সামনে থেকে একটা পাখি লাফ দিয়ে চা গাছের ভিতরে ঢুকে গেলো আর সেটি ছিলো নীলঘাড় শুমচা যদিও কেউ ছবি তুলতে পারিনি।চা বাগান থেকে ফেরার পথে বন মোরগ, তুর্কি বাজ, বসরা শিকরে, তিলানাগ ঈগল এর দেখা পেলাম। এছাড়া পরে ছবি চেক করে দেখা গেল গ্রুপের একজন অতিবিরল কাক-ঠুটি ফিঙের ছবি তুলেছেন,  চা বাগান থেকে বের হয়ে একটা ছাউনিতে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে অন্ধকার ট্রেইলে ঢুকলাম এই ট্রেইলের শেষে একটা পাড়া আছে। এই ট্রেইলে পেলাম ছোট মাকড়মার, সাদাগলা লেজনাচানি, সিন্দুরে মৌটুসি, ব্রোঞ্জ ফিঙে। এরপর ঝর্ণা ট্রেইলে দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম । ছড়াতে নেমে সবাই খুব আনন্দ পেয়েছে সাথে এডভেঞ্চার ফিল তো আছেই। ট্রেইলে হেটে হেটে আমরা মথুরা, ঝুটিয়াল গোদাশিকরে, কালোপিঠ চেরালেজ, বেশকিছু ছোট পাখি দেখতে দেখতে ট্রেইল থেকে বের হলাম। হাতে সময় থাকায় আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পাহাড়ের রাস্তা ধরে উপরে উঠতে শুরু করি , কিসুটা উঠার পর একটু বিশ্রাম নেই তখন বড় বনলাটোরা, সাদাগলা বুলবুলি, সাদা ভ্রু কুটিকুড়ালি পেয়ে যাই। আমাদের টার্গেট ছিলো লালমাথা কুচকুচি, সবুজতাউড়া দেখার, তোলার কিন্তু পেলাম না। এরপর আমরা পাহাড় বেয়ে নেমে আসি নিচে তারপর আমরা ঘাসবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। বিকেল বেলা সেখানে প্রচুর দর্শনার্থীর উপস্থিতি থাকায় হলদে-পেট প্রিনিয়ার দেখা পাওয়া যায়নি। তাই সন্ধ্যার পরপর সবাই মিলে চট্বগ্রামের একটি বিখ্যাত মেজবানি গোশতের রেস্টুরেন্টে যেইয়ে ভরপেট খাওয়াদাওয়া করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সকলেই কমবেশি নতুন পাখির দেখা পেয়েছিলো সেদিন। তবে বিকেলের প্রিনিয়ার দেখা না পেয়ে সবার মন একটু খারাপই ছিলো। মাঝরাত নাগাদ সবাইকে গাড়ি তাদের বাসার কাছে নামিয়ে দেয়।  হাজারিখিলের ভেতরে পাহাড়ি ছড়ায় হাজারিখিল বনের শুরুতে চা বাগানে বার্ডিংরত অবস্থায় সবাই টার্গেট পাখির প্রজাতি (সবগুলোর দেখা পাওয়া নিশ্চিত নয়):  লাল বনমোরগ  মথুরা সবুজ তাউরা  কয়েক ধরনের পেঙ্গা/লাগিংথ্রাশ বিভিন্ন ধরনের বুলবুল, বিশেষ করে জলপাইরং বুলবুল ও ছাইরঙা বুলবুল বিভিন্ন জাতের হরিয়াল ও ঘুঘু কয়েক প্রজাতির দুর্লভ ছাতারে ও কাস্তে ছাতারে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও পরিযায়ী চুটকি ও ফুটকি পাহাড়ি বনের বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিভিন্ন প্রজাতির মৌটুসী, মাকড়মার ও ফুলঝুরী বিভিন্ন প্রজাতির টিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফিঙে ও হরবোলা ইত্যাদি দুই থেকে তিন প্রজাতির প্রিনিয়া, বিশেষ করে হলদে-পেট প্রিনিয়া এগুলো সহ আশা করা যায় সারাদিনে ৭৫-৮০ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যাবে।   

অক্টোবর বিগ ডে ২০২৩ এ চট্বগ্রামে পাহাড়ি বন ও ঘাসবনের পাখির খোঁজে Read More »

ট্রিপ রিপোর্ট – সুন্দরবন (হারবাড়িয়া ও করমজল) সেপ্টেম্বর ২০২৩

বৃহস্পতিবার রাতে আমরা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অতিথীদেরকে তুলে নিয়ে রওনা দেই এবং পদ্মা সেতু হয়ে মংলা পৌছাই। মাঝে গোপালগঞ্জের একটি স্থানে বিরতি দিয়েছিলাম।  ঘাটে পৌছে আমাদের আগে থেকে ঠিক করে রাখা বোটে উঠে পড়লাম সবাই, তখন পুরো ভাটার সময়, মনটা আনন্দিত হয়ে উঠলো যে আমাদের হারবাড়িয়া যাওয়া সহজ হবে, তবে আকাশে ঘন কালো মেঘের আনাগোনা আর ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকানো দেখে ভাবছিলাম এবারের সুন্দরবন ভ্রমণও কি বৃষ্টিতে ভেসে যেতে যাচ্ছে? এখান থেকে রাজশাহীর কয়েক ভাই আমাদের সাথে যোগ দিলেন। তারা আগেরদিন রাতে এসে পৌছেছিলেন। ফজর নামাজ পড়ে আমরা আমাদের সকালের নাশতা পার্সেল নিয়ে নিয়েছিলাম। বোট একটানা দক্ষিণে চলতে লাগলো নদীর এক ধার ঘেঁষে। বৃষ্টি কিছুটা কমায় আমরা বোটের ছাদে উঠে  এদিক ওদিক দেখতে থাকলাম। একটু দূর দিয়ে উড়ে যেতে দেখলাম কালো-মাথা কাস্তেচরা, নদীর ধারে মরা গাছের গুড়ির উপরে বসা দেখলাম কালো-টুপি মাছরাঙা, সবাই এক্সাইটেড হয়ে ছবি তোলা শুরু করলেন, তবে আলো না থাকায় ভালো ছবি হয়নি। এরপরে হারবাড়ীয়ার কাছে পৌছে আমরা বোটের ছাদে বসেই পরোটা-ডিমভাজি-ডাল-সবজি দিয়ে নাশতা সেরে নিলাম এবং খালে ঢুকে গেলাম। ভাটার কারনে খালের পানি কম ছিলো ফলে আমাদের সুবিধাই হল।  আমরা খাল ধরে প্রায় দুই কিলো ভেতরে গিয়েছিলাম এবং এরপরে ঘুরিয়ে ফেরত রওনা দেই। উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে পাওয়া গেলো বাদামী-ডানা মাছারাঙা কয়েকটি, সাদা-গলা মাছরাঙা, সাদা-গলা নীল চুটকি, বন খঞ্জনা, ইউরেশীয় পাপিয়া, কালো-ঘাড় বেনেবৌ ইত্যাদি।  Ruddy Kingfisher Black-naped Oriole Speckled Piculet Brown-winged Kingfisher Plaintive Cuckoo Osprey Asian Dwarf Mudskipper Collared Kingfisher Forest Wagtail খালের অংশ শেষ করে আমরা চলে আসি হারবাড়ীয়া, এখানে এসে বন বিভাগের গার্ড নিয়ে ও বোট ফী দিয়ে আমরা ট্রেইলে প্রবেশ করলাম। পাখির উপস্থিতি বেশ কমই ছিলো। তবে ট্রেইলে উঠেই আমরা দেখা পেলাম লাল মাছরাঙার, ট্রেইলের রেলিং এর উপরেই বসা ছিলো। গার্ড ভাই পাশে একটা যায়গা দেখালেন যেখান দিয়ে দুদিন আগে বাঘমামা পার হয়েছে, পায়ের ছাপ রয়েছে এখনো। ট্রেইলে আমরা উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে পেলাম আরও ইউরেশীয় পাপিয়া, করুন পাপিয়া কয়েকটি, আরও সাদা-গলা মাছরাঙা ইত্যাদি। এরপরে হারবাড়িয়ার পুকুরপাড়ে বসে ছোট মাছেদের ফুট-স্পা নিয়ে ও পুকুরের মাঝখানের কাঠের ঘরে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। এবার আমরা জোয়ার পেলাম, তাহলে আমাদের করমজল যেতে সহজ হবে, আকাশে আলোর অবস্থাও বেশ ভালো ছিলো তখন। বোটের উপরে বসে ঝিমিয়ে নিতে থাকলাম। পথে নদীর ধারে গাছে বসা পেলাম বড় র‍্যাকেটফিঙে, মাছমুরাল ও তিলা নাগ ঈগল। করমজল পৌছে দেখি প্রচুর লোকের উপস্থিতি সেখানে।  আমরা দ্রুত টিকিট কেটে ট্রেইলে ঢুকে পড়লাম, শুরুতেই ভালো ছবি পাওয়া গেল তিলা নাগ ঈগলের। ট্রেইলে উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে আছে বন খঞ্জনা, তিলা কুটিকুড়ালি, ডোরা-পাখ চুটকি লাটোরা ইত্যাদি। এরমধ্যে একও পশলা ঝুম বৃষ্টি নামলো, আমরা সবাই রেইনকোট পঞ্চো পরে বসে বসে তা উপভোগ করলাম। আর জোয়ারের সময় হওয়ায় ট্রেইলের নিচের বনতল পুরোটাই পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। এই অবস্থা এর আগে আমি পাইনি।  Tiger Pugmark at Harbaria Birding at Karamjal Trail Harbaria Group Photo Group Photo in Canal near Harbaria যাহোক বৃষ্টি শেষে আমরা দুপুরের হালকা খাবার শেষ করে আবারও পাখি খুজতে লাগলাম। এরমধ্যে বর্ধিত ট্রেইলের এক যায়গায় এসে দেখা পাওয়া গেলো বিরল এশীয় বামন চিড়িং মাছ এর। যা প্রায় সবার জন্যই নতুন ছিলো আর এই প্রজাতির মাছ দারুন সুন্দর দেখতে আর এদেশে খুব বিরল। শেষ বিকেল পর্যন্ত আমরা ট্রেইলে ছিলাম, শেষ সময়ে পাওয়া গেলো ডোরা-বুক ও বড় কাঠঠোকরা। এছাড়া কালো-কপাল বনমালিও দেখা গেলো তবে সবাই তুলতে পারেননি। সন্ধ্যার আগে ফিরতি রওনা দেয়ার সময় সবাই যখন ব্যাগ গুছিয়ে প্রায় রেডি তখন হঠাত টিকিট কাউন্টারের পাশেই ঘাসের মধ্যে একটি বান্টিং এর দেখা পাওয়া গেলো, সে একমনে খাবার খেয়ে চলেছে। সবাই আবারও ক্যামেরা বের করে ছবি নিলেন এবং এরপর আমরা ফিরতি রওনা দেই। অভিজ্ঞদের দেখিয়ে জানা গেলো পাখিটি একটি বিরল কালো-মাথা চটক। খালের মুখে আবার দেখা পেলাম বাদামী-ডানা মাছরাঙার। ফেরার সময় পথই যেন আগায় না, মংলা ঘাটে পৌছতে বেশ অন্ধকার নেমে আসলো। আমরা এসেই দ্রুত গাড়িতে উঠে ফিরতি রওনা দিলাম। জ্যাম ও ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে খুলনা জিরো পয়েন্ট পৌছতে বেশ সময় লেগে গেল। রাজশাহী ও কুষ্টিয়ার কয়েকজন এখান থেকে আলাদা হয়ে গেলেন, রইলাম আমরা ঢাকাবাসী কয়েকজন। কামরুলে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় পাশের আরেক বিখ্যাত আল আরাফাত এ আমরা রাতের খাবার খেলাম। মেনুতে ছিলো সাদা ভাত, চুইঝাল দিয়ে গরুর গোশতের ভূনা, সবজি এবং ডাল। সবার শেষে সাতক্ষীরার দই এবং চা। খাওয়া শেষ করে আমরা একটানা না থেমে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং সাড়ে বারোটা নাগাদ ঢাকায় ঢুকি। আগেরদিনের রুট অনুযায়ী গাড়ি সকলকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নামিয়ে দেয়। আমরা নিয়মিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একদিন ও একাধিক দিনের ট্রিপ আয়োজন করছি। যাদের সপ্তাহে মাত্র একদিন ছুটি তারাও চাইলে আমাদের সাথে বার্ডিং এ যেতে পারেন। এছাড়া সামনে নভেম্বর মাসের ১০-১১-১২ তারিখে আমাদের তিনদিনের সুন্দরবন ট্রিপ রয়েছে। তাতেও যোগ দিতে পারেন। যোগাযোগ করতে পারেন নিচের নম্বরে বুকিং এর জন্য ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করুন প্লীজ Facebook Whatsapp টার্গেট পাখির প্রজাতি যা যা ছিল (বোল্ড করাগুলো আমরা পেয়েছি):  ধলা-পেট সিন্ধু ঈগল ছোট মদনটাক  কালো-টুপি মাছরাঙা বাদামী-ডানা মাছরাঙা লালচে মাছরাঙা নীল-কান মাছরাঙা  তিলা কুটিকুড়ালি পাতি কাঠঠোকরা ডোরা-বুক কাঠঠোকরা কমলা-পেট ফুলঝুরি  বহুরুপী শিকরে ঈগল। পরিযায়ী বিভিন্ন পাখি নদীর ধারের কাদায় বিভিন্ন সৈকতের পাখি এগুলো সহ আশা করা যায় সারাদিনে ৬০-৭০ প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া যাবে।  দিনশেষে হয়েছিলো মোট ৬১ প্রজাতি।  টার্গেট বন্যপ্রানী (সবগুলো দেখা পাওয়া নিশ্চিত নয়):  নদীর ডলফিন/শুশুক   রামগদি গুইসাপ  চিত্রা হরিণ মায়া হরিণ  লাল বানর  বিভিন্ন বাহারী মাছ ও কাকড়া।  আমাদের যাত্রার ম্যাপ, সকাল থেকে দুপুর হারবাড়িয়া, এরপরে করমজল।

ট্রিপ রিপোর্ট – সুন্দরবন (হারবাড়িয়া ও করমজল) সেপ্টেম্বর ২০২৩ Read More »

ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে বার্ডিং – সেপ্টেম্বর ২০২৩

গত আটই সেপ্টেম্বর শুক্রবার আমরা পাখি দেখার ও ছবি তোলার জন্য গিয়েছিলাম মৌলভিবাজার জেলার কমলগঞ্জের রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টে। ঢাকা থেকে দুজন গাইড সহ আটজন গেস্ট বার্ডার আমরা একটি হায়েস মাইক্রো রিজার্ভ করি। বৃহস্পতিবার রাতে আমরা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আমাদের অতিথিদেরকে তুলে নেই এবং চলা শুরু করি, ফজরের আগেই আমরা শ্রীমংগল পৌছে যাই। সেখানের বিখ্যাত পানসী হোটেলে ফ্রেশ হয়ে, পাশের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে ডিম-খিচুড়ি-চিকেন-সবজি দিয়ে নাশতা করে আমরা আমাদের গন্তব্যে আবার রওনা দেই। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো আর আকাশে বেশ মেঘ ছিলো, তবে সুর্যোদয়ের পরপরই খেয়াল করলাম সূর্য উকি দেয়া শুরু করেছে। রাস্তায় একযায়গায় থেমে চা খেয়ে নিয়ে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছাই।  লোকাল গাইড সাহেব আমাদের জন্য প্রস্তুত ছিলেন, সংরক্ষিত বনে ঢোকার জন্য আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হয় এবং লোকাল গাইড নেয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া বর্তমানে বন বিভাগকে একটি নির্দিষ্ট রেভিনিউও পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমরা স্পটে পৌছেই গাইডকে নিয়ে বনে ঢুকে গেলাম এবং সারি বেঁধে হেটে আগাতে থাকি।  বৃষ্টি তখন আর হচ্ছেনা তবে বন ভেজা ছিলো বেশ, অনেকটা যাবার পরে আস্তে আস্তে আশেপাশে পাখির নড়াচড়া টের পাচ্ছিলাম। গাইড চাচা একযায়গায় গিইয়ে বললেন এখানে ট্রগন থাকে, আমরা যেন রেকর্ড করা ডাক বাজাই। ডাক বাজাতেই অল্পক্ষনেই আমরা উচু গাছের মাথায় পাতার আড়ালে লাল রঙ এর মহা সুন্দর পাখিটির উপস্থিতি ও নড়াচড়া লক্ষ্য করলাম। সকলেই লেগে গেলো তার ছবি তোলার চেষ্টায়, তবে পাখিটি খুবই লাজুক ও অস্থির, আমাদের সুযোগই দিচ্ছিলোনা।  এরমধ্যে পাশে দেখা গেলো কালো দৈত্যাকার কাঠবিড়ালি, যেটা আমাদের দেশের শুধুমাত্র কয়েকটি বনেই দেখা মেলে। আমি এই প্রথম এই প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখলাম। এছাড়া দেখলাম কমলা-পেট হিমালয়ী কাঠবিড়ালিও। ট্রগনের ছবি তোলার তেমন সুবিধা করতে না পেরে আমরা আরও এগোতে থাকলাম এবং একটি বেশ চওড়া ছড়ার ধারে এসে পড়লাম। এখানে ভালো পাখির এক্টিভিটি আমাদের চোখে ও কানে আসছিলো। দলটি দুইভাগ হয়ে দুদিকে হাটা শুরু হলো।  বনের ভেতর থেকে কানে আসছিলো কালো-গলা টুনিটুনি, ফোলা-গলা ও এবটের ছাতারের ডাক। শুনলাম মালাপেঙ্গার ডাকও। কয়েক ঝলকের জন্য চোখে পড়লো নীল-কান মাছরাঙারও।  আমরা ছড়া ধরে আশেপাশের বিভিন্ন ছোট ট্রেইল ও শাখা ছড়ায় ঘুরছিলাম। জোঁক এর ভয় থাকলেও এবং প্রস্তুতি নিয়ে গেলেও সেদিন আমাদেরকে জোঁক তেমন ধরেইনি বলা যায়, কয়েকবার সামনে পড়েছিলো শুধু।  এরমধ্যে দেখা পেলাম এশীয় নীলপরির। পাতার আড়াল থেকে থেমে থেমে ডাকাডাকি করছিলো বেশ কয়েকটি পাখি। এছাড়া দেখা পেলাম কালো-ঝুটি, কালো-মাথা ও সাদাগ-লা বুলবুলিদের। আরও দেখা পেলাম এই বনে সহজে দেখা পাওয়া যাওয়া মেটে বুলবুলেরও।  থেমে থেমে কয়েকবার ট্রগন ডাক দিচ্ছিলো, আমরা স্পট করার চেষ্টাও করলাম কিন্তু নড়াচড়া লক্ষ্য করলেও গাছের পাতার আড়ালে থাকা ও দ্রুত যায়গা পালটানো পাখিটির ছবি তোলা গেলোনা।  আগে বেশ কয়েকবার এই বনে এলেও এবার শাখা ছড়া ধরে অনেক ভেতরে গিয়েছিলাম আমরা, অনেকটা ভেতরে গিয়ে খেয়াল করলাম বনের ভেতরে প্রচুর গাছ ও ঝোপ কেটে ফেলা হয়েছে। যা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই ঐ এলাকায় না যাওয়া ছাড়া। দুপুরে আমাদের ভারী খাবার খাওয়ার সুযোগ ছিলোনা তাই আগে থেকে কিনে নেয়া ফল-ফ্রুট, বিস্কিট, বাদাম, মিষ্টি ইত্যাদি খাচ্ছিলাম।  আমরা হেটে আবার প্রধান বড় ছড়ায় ফিরে আসলাম এবং ইকবাল এইচ. বাবু ভাইয়ের সাথের দলটির সাথে দেখা হলো। তারা জানালেন তারাও ট্রগন বা নীল-কান মাছরাঙার ছবি নিতে পারেননি। তবে উল্লুক পেয়েছেন, এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন পাখির ছবি তুলেছেন ও তুলেছেন বেশ কিছু দুর্লভ প্রজাপতির দেখা।  গ্রুপের কয়েকজন বললেন তারা সকালের ট্রগনের যায়গায় গিয়ে সময় দিতে চান, লোকাল গাইড চাচার সাথে তারা গেলেন, এবং আমরা কয়জন ছড়ায় আরও চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। নীল-কান মাছরাঙ্গার উড়াউড়ি চোখে পড়ছিলো দূর থেকেই তবে কাছে ভীড়তে দিচ্ছিলোনা। এরমধ্যে পেলাম বড় র‍্যাকেটফিঙে, একদল লাল বানর ইত্যাদি। ছড়া ধরে প্রায় এক কিলোমিটার যাবার পরে আমরা দূর থেকে নীল-কান মাছরাঙার ছবি নিতে সক্ষম হই। তবে রেকর্ড শট, মোটেও ভালো ছবি না।  এরপরে আমরা ফিরে আসি আর কিছু ফুলগাছে ফুলঝুরিদের নড়াচড়া লক্ষয় করে সেখানে সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। সিদুরে-পিঠ ফুলঝুরিদের সাথে একটি হলদে-তলা ফুলঝুরির দেখা মিললো এবং আমরা কোনরকম ছবি তুলতে পারলাম। খেয়াল করলাম ততক্ষনে আলো ভয়াবহ কমে গেছে ও আকাশে মেঘের ঘনঘটা। হঠাত জোরে বৃষ্টি শুরু হলো, আমরা দ্রুত প্রধান ছড়ায় ফিরে গাছের নিচে যে যার মত ছাতা-রেইনকোট পরে বৃষ্টি উপভোগ করতে থাকি, আকাশ ভেঙে যেন বৃষ্টি হচ্ছিলো। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই খেয়াল করলাম ছড়ার পানি কাদাগোলা হয়ে গেছে এবং দ্রুত বেশ কিছুটা পানির উচ্চতা বেড়ে গেলো। আধা ঘন্টার বেশি বৃষ্টি হবার পরে থেমে গেলো, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বিকেল বেলার জন্য আরেকবার আমরা ফুলঝুরির চেষ্টা করবো। সেই গাছের নিচে গিয়ে খুজতে থাকলাম কিন্তু এত অন্ধকার পরিবেশ আর পাখিটি অনেকটা উচুতে হওয়ায় সুবিধা করতে পারলাম না আর। ততক্ষনে আবারও বৃষ্টি শুরু, আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আজকের মত ক্ষান্ত দিয়ে ফিরতি রওনা দেয়ার।  ট্রগন এর ডাক আরও কয়েকবার শোনা গেলো কিন্তু অন্ধকার পরিবেশে তাকে আর দেখা যায়নি। সকলে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে জোর কদমে একটানা হেটে বনের প্রান্তে চলে আসলাম, আগের গ্রুপটি বৃষ্টি প্রথমবার শুরু হবার পরেই বেরয়ে এসেছেন জানালেন। আমরা টিউবওয়েল এর পানিতে হাত-মুখ, জুতা-প্যান্ট ও পাইয়ের কাদামাটি ধুয়ে গেঞ্জি পালটে নিলাম এবং গাড়ির দিকে আগাতে থাকলাম।  সকলে গাড়ির কাছে পৌছার পরে আমরা শ্রীমঙ্গলের দিকে ফিরতি রওনা দিলাম। পানসী হোটেলে গাড়ি রেখে ফ্রেশ হয়ে আমরা সবাই রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। মেন্যুতে ছিলো মাটন/চিকেন-কয়েক রকম ভর্তা-ডাল-সবজি- সাদাভাত/পরোটা। যে যার মত অর্ডার করলেন এবং আমরা ভরপেট খেয়ে নিলাম। আমার কাছে শুটকি ভর্তাটি ও মুরগীর ঝালফ্রাই ভয়াবহ ঝাল লেগেছিলো। ভাত খাওয়া শেষে সবাই দই ও আরেক রাউন্ড চা খেয়ে ফিরতি রওনা দেই।  খুব ভালো ছবি তোলার সুযোগ কারোই হয়নি, মোটাঠুটির দেখাই পাওয়া যায়নি তবুও সবাই মিলে আড্ডা, বনের ভেতর দিয়ে হাটা, ছড়ার পানিতে পা ভিজিয়ে সারাদিন হাটাহাটি ও পাখির খোঁজ করা, নানারকম স্তন্যপায়ী, পাখি, পোকা-মাকড় ও প্রজাপতির দেখা পাওয়া এবং দুপুরের পরে ঝুম বৃষ্টিতে পড়া, চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের বিখ্যাত পানসী হোটেলে খাওয়া সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার একটি দিন কেটেছে সবার।  আমরা একটানা গাড়ি চালিয়ে গত রাতের র‍্যুটেই সবাইকে তাদের বাসার কাছে বা কাছাকাছি নামিয়ে দিয়ে মাঝরাত নাগাদ বাসায় নিরাপদে পৌছে যাই।   টার্গেট পাখির প্রজাতিঃ ১. লাল-মাথা কুচিকুচি ২. নীলকান মাছরাঙা ৩. খয়েরী-মাথা শুমচা ৪. মেটে বুলবুল  ৫. হলদে-তলা ফুলঝুরী ৬. এশীয় নীলপরি ৭. চাঁদি-বুক মোটাঠুটি ৮. সাদা-পেট উহিনা ৯. উদয়ী শাহবুলবুল ১০. লালচে-কপাল ছাতারে ১১. কালো-গলা টুনটুনি ১২. নীল-ডানা হরবোলা ১৩. জলপাই বুলবুল ১৪.  স্তন্যপায়ী দেখা পেয়েছিঃ দৈত্যাকার, কমলা-পেট ও ইরাবতি কাঠবিড়ালি, গেছো ছুঁচো, পাতি শেয়াল, লাল বানর, হুল্লুক, চশমা হনুমান। 

ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে বার্ডিং – সেপ্টেম্বর ২০২৩ Read More »

ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় সুন্দরবন আগস্ট ২০২৩

ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় সুন্দরবন আগস্ট ২০২৩ গত ২৫শে আগস্ট আমরা ০৭ জন গিয়েছিলাম সুন্দরবনের করমজলে বনের পাখি দেখা ও ছবি তোলার জন্য। আমাদের যাবার কথা ছিলো মোট আটজনের, যার মধ্যে ছয়জন গেস্ট ও দুজন গাইড। একেবারে শেষমুহুর্তে মানে বাস ছাড়ার পরে একজন গেস্ট তার জরূরী কাজ পড়ে যাওয়ায় ক্যান্সেল করেন তাই আমরা সাতজনই চললাম সুন্দরবনের করমজল। মংলা পৌছলাম ভোর ছয়টার ভেতর, হোটেল পশুর এ ফ্রেশ হয়ে আমরা মাঝি সাহেবকে নিয়ে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। বেলা বাড়ার পরপর বৃষ্টি হবার পূর্বাভাস ছিলো কিন্তু আমরা নাস্তা করতে করতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল এবং চলতে থাকলো। ঘন্টাখানেক পরে একটু কমলে আমরা করমজলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি, তবে বৃষ্টির কারনে বোটের ছাদের নিচেই থাকতে হল। নদীতে কিছু দেখা গেলোনা। করমজল পৌছে আমরা টিকিট করে ফেললাম, তবে বৃষ্টি একটানা পড়ছিলো। টিকিট ঘরের পাশেই পেয়ে গেলাম সাদা-ঘাড় মাছরাঙা আর একজোড়া তিলা নাগ ঈগল। বৃষ্টির কারনে আমরা ট্রেইল এক্সিট পয়েন্টের পাশে একটা ছাউনির নিচে অবস্থান নেই এবং বৃষ্টি একটু কমলেই ট্রেইলে কিছুদূর গিয়ে পাখি খুজছিলাম, সুযোগ থাকলে ছবি তুলছিলাম, আবার বৃষ্টি বাড়লে ফেরত আসছিলাম। এ যেন প্রকৃতির সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়া। ট্রেইলে ঢুকতেই কানে এল প্যারা শুমচা আর লাল মাছরাঙার ডাক, কিন্তু দেখা পেলাম না। ছবি তোলা হল ডোরা-বুক কাঠঠোকরা, বড় র‍্যাকেটফিঙে, কালো-কপাল বনমালী সহ কিছু পাখির।  এরমধ্যে বৃষ্টি আবার এত জোরে নামলো যে মনে হচ্ছিলো আজকে বার্ডিং বুঝি পন্ড হতে চলেছে। আমরা সবাই বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা মাথায় ক্যামেরায় পলিথিন/গামছা জড়িয়ে টাওয়ার পর্যন্ত গেলাম ও টাওয়ারে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। সেখান থেকে চোখে পড়লো সিঁদুরে মৌটুসী, ছোট বক, বড় কাঠঠোকরা ইত্যাদি। বৃষ্টি কমলে আবারও আমরা বেরিয়ে পড়লাম এবং ট্রেইল ধরে আবার শুরুতে চলে আসি। এখানে সুন্দরবনের বড় ম্যাপ, ডলফিন ও তিমির জাদুঘর জাতীয় প্রদর্শনি, কুমির ও হরিন প্রজননকেন্দ্র রয়েছে সেগুলো দেখলাম। বানর বেশ বিরক্ত করছিলো, খাবারের খোঁজে আশেপাশে হানা দিচ্ছিলো।  ট্রেইল থেকে আমরা এরমধ্যে দেখা পেয়েছি বুনো হরিন, রামগদি গুইসাপ, হরেক রকম কাকড়া, মাডস্কিপার মাছ ইত্যাদির।  আমরা আরও কয়েকবার ট্রেইল চক্কর দেবো ঠিক করলাম, বৃষ্টিতেই বেশ ঝুকি নিয়ে গেলাম, কয়েকজন ছাউনির নিচে রয়ে গেলেন। আমরা একটা ছোট পাখির ঝাঁক পেয়ে যাই তাতে ছিলো ছোট সাহেলী, শেতাক্ষী, তিলা কুটিকুড়ালী, কমলা-পেট ফুলঝুরী, মেটে-টুপি বামন কাঠঠোকরা, কালো-কপাল বনমালী সহ অন্যান্য মৌটুসি ও ফুলঝুরিরা। খবর শুনে পেছনে রয়ে যাওয়া কয়েকজনও এসে যোগ দিলেন কিন্তু ততক্ষনে বৃষ্টি আবার ধেয়ে নামছে।  আমার ক্যামেরায় পানি ঢুকে গেছিলো একটু, অন হচ্ছিলোনা। আমাদের খাবার চলে আসায় আমরা বোটে ফিরে বোটের ভেতরে বসে ভরপেট খেয়ে নিলাম এবং শেষ আরেক চক্কর দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। বৃষ্টি অনেকটাই কমে এসেছিলো, তবে সারাদিনে মাছরাঙাদের দিক থেকে দিনটা ফ্লপ ছিলো তাই আমাদের সবার মন খারাপ। প্যারা শুমচার দেখাও পেলাম না শুধু ডাকই শুনলাম। বেশ কিছুদূর গিয়ে ফিরে আসার সময় পেলাম এবটের ছাতারে ও চুনি-গাল মৌটুসী। একেবারে শেষমুহুর্তে হঠাত শুনি প্যারা শুমচা ডাকা শুরু করেছে তাও কয়েকটা একসাথে। লাল মাছরাঙার ডাকও শোনা গেল কয়েকবার। বেশ খোজাখুজি করে প্যারা শুমচা একটাকে স্পট করা গেলো এবং সবাই দেখলেন ছবি তুললেন। লাল মাছরাঙাটা সেদিন অধরাই রয়ে গেলো।  যাহোক আমরা ঘাটে আসলাম এবং বটে চড়ে বসে ফিরতি রওনা দিলাম। বৃষ্টি কিছুটা কম থাকায় ছাদে বসেই ফিরতে পারলাম। নদীতে অল্প সময়ের জন্য দেখা গেলো শুশুক এর। ট্রিপটি আশানুরুপ সফল হয়নি তবে আমরা সবাই বেশ কিছু নতুন পাখি দেখা ও ছবি তোলার অভিজ্ঞতা সহ এডভেঞ্চারাস একটি ট্রিপ শেষ করলাম। বাস স্ট্যান্ডে ফিরে আমরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং রাত বারোটার আগেই বাসায় পৌছে যাই নিরাপদে।  আমাদের টার্গেট স্পিশিজের ভেতরে প্রায় ৭০% এর আমরা দেখা পেয়েছিলাম। আবহাওয়া ভালো থাকলে হয়তো আরও কিছু দেখা যেতো। আমরা মংলা ও করমজল মিলিয়ে ৫৫ প্রজাতির পাখি দেখেছিলাম সেদিন।  এই লিংকে দেখুন সেদিনের ইবার্ড চেকলিস্টঃ https://ebird.org/checklist/S148037355  টার্গেট পাখির প্রজাতিঃ ১. কালো-কপাল বনমালি ২. দাগি কুটিকুড়ালি ৩. ডোরাবুক কাঠঠোকরা ৪. পাতি কাঠঠোকরা ৫. ৬. বড় ও ছোট হলদেসিথি কাঠঠোকরা ৭. লালচে মাছরাঙা ৮. বাদামী ডানা মাছরাঙা ৯. নীলকান মাছরাঙা ১০. সাদা-ঘাড় মাছরাঙা ১১. প্যারা শুমচা ১২. কমলা-পেট ফুলঝুরি ১৩. সিঁদুরে সাহেলি ১৪. সোনা-কপালী হরবোলা ১৫. সিঁদুরে মৌটুসি ১৬. বড় র‍্যাকেট ফিঙে ১৭. ছোট মদনটাক ১৮. ধলাপেট সিন্ধু ঈগল ১৯. মেটে-টুপি বামন কাঠঠোকরা ২০. মেটে-বুক ঝিল্লি ইত্যাদি। এছাড়াও দেখবো/খুজবো সুন্দরবনের মায়া হরিন, লাল বানর, রামগদি গুইসাপ, পশুর নদীতে ডলফিন সহ বেশ কিছু বন্যপ্রাণী।

ট্রিপ রিপোর্ট – বর্ষায় সুন্দরবন আগস্ট ২০২৩ Read More »

হলদে-পেট প্রিনিয়ার খোঁজে গিয়ে আরও কিছু (মে – ২০২৩)

গত ১লা মে ২০২৩ তারিখে ঢাকা থেকে আমি আর বাবু ভাই ঢাকা থেকে চট্বগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। বাস থেকে নামতে নামতে সকাল সাড়ে ছয়টা বেজে যায়, রাস্তায় বেশ কন্টেইনারের ভীড় ছিলো বলে বাস তেমন টানতে পারেনি। এরপরে আমরা সোজা সিএনজিতে করে অনন্যা চলে যাই যেখানে রাস্তার পাশেই বেশ বড় এলাকাজুড়ে ঘাসবন রয়েছে। তার মধ্যে বিরল হলদে-পেট প্রিনিয়া পাওয়া যায়। আমরা সিএনজি থেকে নেমে দ্রুত একটা ঝুপড়ি হোটেলে নাস্তা সেরে কাজে নেমে পড়ি। চট্বগ্রামের পরিচিত বার্ডারভাইদের কজন রাজশাহী গেছেন, অন্যরা ব্যস্ত ফলে আমাদেরকে নিজে নিজেই ঘুরতে হবে। তবে সায়েদ আবদু ভাইয়ের থেকে ভালোভাবে তথ্য নিয়ে এসেছি, এজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ। উনি তখন হয়তো পদ্মার বুকে গা ডুবিয়ে ছোট পানচিল তোলায় ব্যস্ত। আমরা অনন্যায় প্লটের মাঝখানের রাস্তাগুলো ধরে ধরে হাটছিলাম আর প্রিনিয়াদের কার্যকলাপ খেয়াল করছিলাম। যায়গাটায় প্রচুর নিরল প্রিনিয়া আমাদের চোখে পড়েছিলো। বেশ কিছুক্ষন ইতিউতি হাটাহাটির পর হঠাত মুখস্থ করে যাওয়া হলদে-পেট প্রিনিয়ার ডাক ও কাছেই এক ঝোপে নড়াচড়া লক্ষ্য করি। বাইনোকুলার লাগিয়ে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে যে পাখি পাওয়া গেছে। এরপরে বেশ অনেক সময় ধরে আমরা বেশ কয়েকটি প্রিনিয়ার ছবি তুলি আর ডাক রেকর্ড করি। আমাদের দুইজনের জন্যই পাখিটি নতুন। এই ঘাসবনে লালচে-টুপি ছাতারেও পাওয়া যায়, সম্প্রতি দেখাও গেছে। ডাক বাজিয়ে বাজিয়ে বেশ ঘুরাঘুরির পরেও এই ছাতারের দেখা পেলাম না। বাবু ভাইয়ের তোলা আছে আগে, আমার জন্য নতুন হত। ছাতারেটাকে না পেলেও আমরা ছোত কানাকুয়ার দেখা পেলাম, সে খুব কাছ থেকে একেবারে ফাঁকা ডালে বসে আমাদের সামনে দারুন ছবি তোলার সুযোগ করে দিলো। ডাকও রেকর্ড করলাম কাছ থেকে। এই পাখিটি আমাদের দুইজনেরই আগে থাকলেও এই প্রথম পুরুষ পাখির এত কাছ থেকে এত সুন্দর ছবি নিতে পারলাম। আমার মনেহয়না বাংলাদেশে এই পাখির এরকম ছবি আর কারও আছে। এরপরে আমরা অনন্যার পাট চুকিয়ে সাড়ে নয়টার দিকে আবার অক্সিজেন মোড়ে ফেরত আসি আর ফটিকছড়ির বাস ধরি, ঘন্টা দেড়েকের পথ লোকাল বাসে। দুজনেই একটু ঘুমিয়ে নেই কারন রাতে বাসে ভালো ঘুম হয়নি। ঝরঝরে শরীরে ফটিকছড়ি নেমে দুপুরের জন্য নাস্তা-ফল কিনে ব্যাগে ভরে হাজারিখিলের উদ্দেশ্যে সিএনজি রিজার্ভ করে রওনা দেই। সেখানে পৌছে টিকিট কেটে এবং নিজেদের তথ্য ও ফোন নাম্বার কাউন্টারে জমা করে বনের ভেতর হাটা শুরু করলাম। প্রথমেই অন্ধকার ট্রেইলে যাই, খাসিয়া পল্লীর আগ পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসি কারন পাখির নড়াচড়া বেশী ছিলোনা। তার উপর রোদ চড়ে গেছে, সময় প্রায় বারোটা। ফিরতি পথে কালো-ঘাড় রাজনের বাচ্চা সহ বাসা দেখি, একযায়গায় খুব ভালোভাবে কালো-গলা টুনটুনির ডাক শুনতে পাই। আমার আগে দেখা আছে তবে ছবি বা ডাক রেকর্ড নেই তাই আমি ছবি বাদ দিয়ে আগে ভালোভাবে ডাক রেকর্ড করি। পাখিটা এরপরে ছবি তোলার সুযোগ না দিয়েই পালিয়ে গেল, ছবি তোলা হলোনা। আরেকটু ফিরে অন্ধকার মত যায়গায় ট্রেইলের পাশের ছড়ায় শুকনো মাটিতে একজোড়া ছাতারে দেখি, বাইনোকুলারে ভালো করে দেখেই এক্সাইটেড হয়ে বাবুভাইকে জানাই যে এগুলো বিরল হলদেটে-বুক ছাতারে, যা আমাদের দুজনের জন্যই নতুন। বেশ কয়েকবার পাখিদুটো ফিরে ফিরে আসে তবে বেতঝোপের ভেতর অন্ধকারে হওয়ায় ভালো ছবি তুলতে পারিনি আমি, বাবু ভাই ভালো ছবি পান। এরপরে সিড়ি বেয়ে টিলায় উঠে নাস্তা করে নেই এবং বিশ্রাম নেই। জাবি প্রাণীবিদ্যার একটি জুনিয়র ছাত্রের সাথে দেখা হয় তখন, তার বাড়ি পাশেই হাটোহাজারিতে, সে হাজারিখিলের প্রাণীদের নিয়ে একটি গবেষনার উপাত্ত সংগ্রহ করতে এসেছে। এরপরে আমরা সিদ্ধান্ত নেই যে আমরা ছড়ার ট্রেইলে ঢুকবো, সেখানে নাকি কাঠময়ুর পাওয়া যায়। ট্রেইল ধরে আমরা আগাতে থাকি কিন্তু শুক্রবার হওয়ায় প্রচুর লোকজনের চলাচল খেয়াল করি, অনেক টুরিস্ট ব্লুটুথ স্পীকারে উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছিলেন। ছড়ার অল্প পানিমত একটা যায়গায় বিকেল নামার সাথে সাথে বুলবুলিদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। সেখানে আমরা বেশ কিছু সময় ব্যয় করি এবং ছবি তুলি। এরমধ্যে দেখি চট্বগ্রাম বার্ড ক্লাবের বড়ভাই আহসান উদ্দীন চৌধুরী তার এক কাজিনকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। উনার পরামর্শ মত একযায়গায় লেবুগাছের মধ্যে বসে ছড়ায় চোখ রাখি। শেতাক্ষী, নেপাল ফালভেটা, ৪-৫ রকমের বুলবুলের ছবি পাই পানি খেতে আসার সময়। এরমধ্যে একফাকে আমি আর বাবুভাই দুজনেই লেবুগাছে একটি কালো-গলা টুনটুনি স্ত্রী পাখির ছবি তুলতে পারি কাছ থেকে। আমার জন্য নতুন ছবি, বাবু ভাইয়ের জন্য বেটার ছবি। এছাড়া পানি এসেছিলো চাকদোয়েল। কাঠময়ুরের ডাকও শুনিনি আমরা সেদিন একবারও, তাই সন্ধ্যার আগে আগে পাহাড়ি ট্রেইলে একটু ঢুকি কারন মুখেই নাকি মাঝেমধ্যে লাল-মাথা কুচকুচি পাওয়া যায় মাঝেমধ্যে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করেও কোন হদিস পাওয়া গেলোনা, তবে একটি সবুজ তাউরা বেশ ডাকাডাকি করছিলো। অন্ধকার হয়ে আসার আমরা দুজন ফিরতি পথ ধরি, চা বাগানে একটু ঢু মারি। সেখানে লাল-ঘাড় পেঙ্গা দেখি, এবং একজোড়া বাংলা কুবোর ডাক ও দেখা আবার পাই এখানেও, বাহ। ঝোপের মধ্য থেকে লাফিয়ে একটি ক্রেক জাতীয় পাখি আবার ঝোপে ঢুকে যেতে দেখি কিন্তু কি ছিলো বুঝতে পারিনি, ডাহুক টাহুক নয় মোটেও। জোরকদম হেটে আমরা হাজারিখিল বাজার পর্যন্ত চলে আসলাম। মন বেশ ফুরফুরে ছিলো, কারন আমার তিনটি ও বাবু ভাইয়ের দুটি লাইফার হয়েছে। প্রায় দুমাস ধরে আমার লাইফারের ক্ষরা চলছিলো , তা কাটলো অবশেষে। চা খেয়ে শহরের উদ্দেশ্যে সিএনজিতে উঠে বসলাম এবং যেয়ে প্রথম সুবিধাজনক বাসে চেপে ঢাকার পথ ধরলাম। আমার তিনটি ছবির লাইফার হচ্ছেঃ হলদে-পেট প্রিনিয়া, হলদেটে-পেট ছাতারে আর কালচে-গলা টুনটুনি। সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

হলদে-পেট প্রিনিয়ার খোঁজে গিয়ে আরও কিছু (মে – ২০২৩) Read More »

Scroll to Top