বাংলাদেশের দিবাচর শিকারী পাখি
বাংলাদেশের দিবাচর শিকারী পাখিদের পরিবারে শাহীন বাদে চিল, বাজ, ঈগল, শকুন, কাপাসী, মেছো-ঈগল, শিকরে ও তিশাবাজ মিলিয়ে মোট ৪৫ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে। মাছমুরাল Osprey Pandion haliaetus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বাংলাদেশের সুলভ পরিযায়ী পরিযায়ী শিকারী পাখি। আকারে বেশ বড় এবং সাদা-কালো রঙ এর এই শিকারী পাখিটি মূলত মাছ শিকার করে। সারাবিশ্বে এই পাখিটির একটিমাত্র প্রজাতিই পাওয়া যায়। আমাদের দেশের সকল এলাকায় বড় জলাশয়ের আশেপাশে শীতে এদের দেখা যায়। মাছ ধরায় এদের জুড়ি মেলা ভার। এদের প্রথম ছবি তুলেছিলাম কক্সবাজার থেকে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে মাছমুরাল, ফেনী কাটুয়া চিল Black-winged Kite Elanus caeruleus আমাদের দেশের আবাসিক পাখি বাংলাদেশের তিনধরনের চিলের মধ্যে এটি সবচেয়ে ছোট। ডানার উপরিভাগ কালো, চোখ টকটকে লাল। এছাড়া সারাদেহ ধবধবে সাদা এই আবাসিক পাখিটিকে আমাদের দেশের সকল এলাকায় উন্মুক্ত প্রান্তরে পাওয়া যায়। এরা সাধারনত ছোট ইদুর ও ছুঁচো জাতীয় স্তন্যপায়ী, সরিসৃপ বা ছোট পাখি ইত্যাদি শিকার করে খেয়ে থাকে। শিকার টার্গেট করলে সেটা লক্ষ্য করে একস্থানে এরা ভেসে থেকে উড়তে থাকে, এরপর সুবিধামত হলে ঝাপ দিয়ে পড়ে শিকার ধরে ফেলে। এরপরে সাধারনত মাটিতে বসে বা কোন গাছ/কান্ডের উপরে বসে খেয়ে ফেলে। এদের প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে সহজে দেখা মেলে কাটূয়া চিল, ঢাকা পাখিটির ডাক শুনুন মিশরীয় শকুন Egyptian Vulture Neophron percnopterus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বাংলাদেশের অত্যন্ত বিরল পরিযায়ী এই প্রজাতির শকুন। দেহ সাধারনত সাদা এবং ঠোট ও মাথা হলদে। আকারে বেশ ছোট অন্য সকল শকুনের চেয়ে, লেজ ত্রিকোনা আকৃতির। বাংলাদেশে গত একদশকের মধ্যে দুইবার এদের দেখা মিলেছে, একবার রাঙামাটির কাপ্তাই বনে, আর আরেকবার করোনাকালীন সময়ে রাজশাহী থেকে আরেকবার একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি। বিশ্বে বিপন্ন এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি উদয়ী মধুবাজ Oriental Honey-buzzard Pernis ptilorhynchus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী আমাদের দেশের বেশ সুলভ শিকারী পাখি, প্রায় সারাবছরই পাওয়া যায় এদের। এদের অনেকগুলো রূপ রয়েছে, প্রায় ১৮টি, আবার পুরুষ ও স্ত্রী পাখির রূপও আলাদা। আর এগুলো বিভিন্ন ঈগল ও বাজদের মত হয় ফলে মধুবাজ দেখে অনেকেই অন্য শিকারী পাখি ভেবে বসেন। সহজে এদের চেনার উপায় হল এদের চিকন ঘাড়, কবুতরের মত মাথা ও ঠোট, দুর্বল ডানা ও লেজ ইত্যাদি। এরা মৌমাছির চাক এ বসে সোজা চাকে কামড় বসায় এবং খায়। এদের এই অভ্যাসের কারনে এদের এমন নাম হয়েছে। প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার এলাকা থেকে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে মধুবাজ, শেরপুর জার্ডনের বাজ Jerdon’s Baza Aviceda jerdoni আমাদের দেশের আবাসিক পাখি আমাদের দেশের পাহাড়ি বনাঞ্চলের অত্যন্ত সুন্দর আবাসিক শিকারী পাখি এই জার্ডনের বাজ, মাথায় ঝুঁটি রয়েছে। সাধারনত আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি বনে। তবে এদের একটি উপপ্রজাতি সম্ভবত পরিযায়ী, তাই ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও সাভার থেকেই এই পাখিটিকে শীতে কয়েকবার পাওয়া গিয়েছে। আমি প্রথম ছবি তুলেছিলাম ঢাকার সাভার থেকে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে কমই দেখা মেলে জার্ডোনের বাজ, ঢাকা কালো বাজ Black Baza Aviceda leuphotes আমাদের দেশের আবাসিক/শীতের পরিযায়ী এটিও আমাদের দেশের আরেক অনিন্দ্য সুন্দর শিকারী পাখি। এরা মূলত আমাদের দেশে পরিযায়ন করে আসে, তবে অল্প কিছু সংখ্যায় এদেশে প্রজননও করে বলে জানা গেছে। দেহ মূলত কালো, বুকের কাছে সাদা ডোরা আর ডানার উপরিভাগে কিছু লালচে পালক থাকে, মাথায় কালো ঝুঁটি রয়েছে। আমাদের দেশের সিলেট ও চট্বগ্রাম বিভাগ এর পাহাড়ি বনে সহ গারো পাহাড়ে এদের দেখা মেলে। এছাড়া ঢাকা ও বগুড়ায় এদের দেখা পাবার দাবী রয়েছে। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম গারো পাহাড় থেকে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে কালো বাজ, হবিগঞ্জ সরু-ঠোট শকুন Slender‑billed Vulture Gyps tenuirostris আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী আমাদের দেশের অত্যন্ত বিরল পরিযায়ী পাখি। এদের ঠোট সরু ও লম্বা। বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক এই প্রজাতির শকুনের দেখা পাওয়া যায়নি। বিশ্বে মহাবিপন্ন এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি সাদা-কোমর শকুন/বাংলা শকুন White-rumped Vulture Gyps bengalensis আমাদের দেশের আবাসিক পাখি বাংলাদেশের আবাসিক শকুন প্রজাতি এটি। কয়েক দশক আগেও সারাদেশের সর্বত্র পাওয়া যেত। তবে গবাদীপশুর চিকিৎসায় কিটোপ্রোফেন সহ কিছু ওষুধের ব্যবহার করার পরে সেই ওষুধ প্রয়োগ করা গরু মারা গেলে সেই গরু খেয়ে এই শকুন মারা পড়ে। গত কয়েক দশকে এই শকুনের সংখ্যা কমতে কমতে আজ মাত্র আড়াইশোতে ঠেকেছে আমাদের সারা দেশে। সুন্দরবন অঞ্চলে কিছু আর মৌলভিবাজারের রেমা-কালেঙ্গার জঙ্গলে বাস করে ও প্রজনন করে। এছাড়া দেশের গাইবান্ধা ও পাবনায় খুব ছোট সংখ্যক পাখি টিকে রয়েছে। এখনো এদের ছবি বা দেখা পাইনি। বিশ্বে মহাবিপন্ন এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি ইউরেশীয় গৃধিনী Eurasian Griffon Vulture Gyps fulvus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী এটিও আমাদের দেশের অত্যন্ত বিরল পরিযায়ী শকুন। কয়েক দশকের মধ্যে সম্ভবত এদের আমাদের দেশে দেখা মেলেনি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি হিমালয়ী গৃধিনী Himalayan Griffon Gyps himalayensis আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বাংলাদেশের উপর দিয়ে পরিযায়ন করে শীতে হিমালয় অঞ্চল থেকে উড়ে দক্ষিণ দিকে উড়ে যায়। এসময় আমাদের দেশের অনেক স্থানেই এই প্রজাতির শকুনকে উড়ে যেতে বা কোথায় বসে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। এছাড়া কিছু শকুন দীর্ঘ পরিযায়নের পথে ক্লান্ত হয়ে অবতরন করতে বাধ্য হয় এবং মানুষের হাতে ধরা পড়ে। তখন খবর পেলে দেশের বন বিভাগ ও আইইউসিএন নামক সংস্থা তাদের উদ্ধার করে পুনর্বাসন করে থাকে। আমাদের দেশের দিনাজপুরের শালবনে এরকম একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে পরিচর্যা ও খাবার খাইয়ে আবারও স্বাস্থ্যবান হলে তখন শকুনগুলোকে আবারও প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেয়া হয়। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ঢাকায় বাসার ছাদ থেকে। বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ এদেশে কমই দেখা মেলে হিমালয়ী গৃধিনী, ঢাকা লাল-মাথা শকুন/রাজ শকুন Red-headed Vulture Sarcogyps calvus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী অত্যন্ত বিরল প্রজাতির এই শকুন আমাদের দেশে একদা পাওয়া যেত তবে সকল ধরনের শকুনের সংখ্যা কমায় এই বিরল শকুনকে আর দেখাই যায়না বর্তমানে। সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে। বিশ্বে মহাবিপন্ন এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি কালো শকুন Cinereous Vulture Aegypius monachus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী গাড় কালো পালকবিশিষ্ট বেশ বড় আকৃতির এই শকুন আমাদের দেশের আরেক বিরল পরিযায়ী। প্রতিবছর একদুটি শকুনের খবর পাওয়া যায় এদেশে। ক্লান্ত আহত অবস্থায় ধরা পড়ে সাধারনত, এমন একটি শকুনকে গতবছর দিনাজপুরে পুনর্বাসন শেষে অবমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া গত মৌসুমে সুন্দরবন থেকে একটি শকুনকে দেখা পাওয়ার দাবি রয়েছে। বিশ্বে প্রায়-বিপদগ্রস্থ এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি তিলা নাগ-ঈগল Crested Serpent-Eagle Spilornis cheela আমাদের দেশের আবাসিক পাখি আমাদের দেশের সুলভ আবাসিক ঈগল এটি। এর অন্যান্য প্রচলিত নাম হচ্ছে খোঁপা ঈগল, তিলাজ বাজ ইত্যাদি। এরা মূলত সাপ শিকার করে খায়, এছাড়া ছোট সরিসৃপ, স্তন্যপায়ীও খেতে পারে সুবিধামত পেলে। বাংলাদেশের সকল ধরনের বনাঞ্চলে সহ উদ্যানমত যায়গায় সারাদেশেই এদের দেখা পাওয়া যায়। বড় উচু গাছে বাসা করে।
বাংলাদেশের দিবাচর শিকারী পাখি Read More »