বাংলাদেশের খঞ্জনা ও তুলিকা

বাংলাদেশে মোট ৭ প্রজাতির খঞ্জনা পাওয়া যায় বন খঞ্জনা Forest Wagtail Dendronanthus indicus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী সাধারনত গাছপালা ঢাকা ঝোপঝাড় এলাকা পছন্দ করে। একসাথে একদুটো থাকে সাধারনত। গাছের ডালেও চড়ে বসে প্রায়ই। সবুজাভ দেহে ও গলায় ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। অন্যান্য খঞ্জনাদের মতই ডাকতে ডাকতে উড়ে যায়। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম সুন্দরবনে।  বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে বন খঞ্জনা, সুন্দরবন মেটে খঞ্জনা Grey Wagtail Motacilla cinerea আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী এরা সাধারনত প্রবাহমান পানির ধারার আশেপাশে বেড়াতে পছন্দ করে। আর বসার জন্য পাথর বা সিমেন্টের ব্লক পছন্দ করে। এর লম্বা লেজ ও হলুদ তলা দেখে সহজেই একে চেনা যায়। আমি ঢাকার গুলশান লেকের ধারে একে প্রথম দেখি ও ছবি তুলি, এরপরে একে আশুলিয়াতে ও শেরপুর ঝিনাইগাতিতে দেখেছি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে মেটে খঞ্জনা, শেরপুর পাখিটির ডাক শুনুন পশ্চিমের হলুদ খঞ্জনা Western Yellow Wagtail Motacilla flava আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী দুরকম হলুদ খঞ্জনার মধ্যে একেই কম দেখা যায়। শীতের শুরুতে একে ইস্টার্ন গুলোর থেকে আলাদা করা খুব মুশকিল। থাকে ঝাঁক বেঁধে আর দেখতেও হয় একই রকম। সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হল ডাক রেকর্ড করে সনোগ্রাফ চেক করা। আমি ওয়েস্টার্ন ভেবে এপর্যন্ত যা তুলেছি সবই ইস্টার্ন আইডি হয়েছে, তাই এর এখনো ছবি নেই আমার কাছে। এর বেশ কিছু উপপ্রজাতি আছে, বাংলাদেশে কয়েকটি আসে পরিযায়ন করে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে কমই দেখা মেলে দেখা পেয়েছি কিনা নিশ্চিত নই পাখিটির ডাক শুনুন পূবের হলুদ খঞ্জনা Eastern Yellow Wagtail Motacilla tschutschensis আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী খঞ্জনদের মধ্যে এটিই মনেহয় বাংলাদেশের বিল-মাঠ জাতীয় এলাকায় সবচেয়ে বেশী পরিমানে দেখা যায়। বেশ কিছু উপপ্রজাতি রয়েছে, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে আসে পরিযায়ন করে প্রতি শীতে। দেশের অনেক যায়গায় আমি একে দেখেছি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে সহজে দেখা মেলে পূবের হলুদ খঞ্জনা, ঢাকা পাখিটির ডাক শুনুন হলদে-মাথা খঞ্জনা Citrine Wagtail Motacilla citreola আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বাংলাদেশের খঞ্জনাদের মধ্যে প্রজননকালে সবচেয়ে সুন্দর মনেহয় এই খঞ্জনাটি। এর সারা মাথা টকটকে হলুদ হয়ে যায়। দেশের সর্বত্র মাঠ ও ভেজা বিল এলাকায় একে অন্য খঞ্জনাদের সাথে মিশে বেড়াতে দেখা যায়। শীতের শুরুতে অবশ্য এর সৌন্দর্য অতটা থাকেনা, মার্চ এপ্রিলে দেখা যায় আসল রূপ। এরা শীতের বেশ আগেই আগস্ট এর দিকেই এদেশে চলে আসে আর যেতে যেতে প্রায় এপ্রিল করে। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে সহজে দেখা মেলে হলদে-মাথা খঞ্জনা, ঢাকা পাখিটির ডাক শুনুন সাদা-ভ্রু খঞ্জনা White-browed Wagtail Motacilla maderaspatensis আমাদের দেশের আবাসিক পাখি এটি হচ্ছে দেশের একমাত্র আবাসিক খঞ্জনা। এদের সাধারনত জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায় নদীর ধারে বা মাঠের প্রান্তে। এদের অত বড় সংখ্যায় দেখা যায় না। একে আমি দেশের বেশ কিছু যায়গা থেকেই তুলেছি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে সাদা-ভ্রু খঞ্জনা, শেরপুর পাখিটির ডাক শুনুন সাদা খঞ্জনা White Wagtail Motacilla alba আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় সম্ভবত এই খঞ্জনাটিকে। কারন এর চরে বেড়ানোর যায়গা মাঠ-ঘাট বিল সহ লোকালয় ও বাসাবাড়ির ছাদেও। আর বাংলাদেশে আসেও হাজারে হাজারে। পরিযায়নের সময় একসাথে কয়েক হাজার পর্যন্ত দেখা গেছে কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও ঢাকায়। এর প্রায় ৬-৭টি উপপ্রজাতি বাংলাদেশে এপর্যন্ত দেখা গেছে। এই পাখিটিকে ছোটবেলা থেকেই আমি বাসার ছাদে জমা পানির আশেপাশে লেজ দুলিয়ে হাটতে দেখে আসছি, আর ছবি তুলেছি সারাদেশের বিভিন্ন যায়গা থেকেই। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে সহজে দেখা মেলে সাদা খঞ্জনা, কক্সবাজার পাখিটির ডাক শুনুন বাংলাদেশে দশ প্রজাতির তুলিকা দেখা গেছে দেখা গেছে বলছি এই কারনে যে সবগুলো এখন আর পাওয়া যায়না, একটি সম্প্রতি যোগ হয়েছে। এদের সাথে সংক্ষেপে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। রিচার্ডের তুলিকা Richard’s Pipit Anthus richardi আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বড় আকৃতির পরিযায়ী তুলিকা। এর পেছনের নখ বেশ লম্বা এবং দেহও বেশ শক্তিশালী গড়নের হয়ে থাকে, চলেও সোজা হয়ে। সারাদেশেই পাওয়া যায়, খোলা প্রান্তর ও শুকনো ক্ষেত পছন্দ করে। এর ডাক শুনে সহজেই একে ফীল্ডে শনাক্ত করা যায়। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে রিচার্ডের তুলিকা, সাতক্ষীরা পাখিটির ডাক শুনুন ধানি তুলিকা Paddyfield Pipit Anthus rufulus আমাদের দেশের আবাসিক পাখি শীতের পরিযায়ী গ্রীষ্মের পরিযায়ী অনিয়মিত পাখি সাধারনত ধানক্ষেত এলাকায় পাওয়া যায় বলেই হয়তো এর নাম এমন হয়েছে। বাংলাদেশের একটি আবাসিক পাখি এটি। দেহের আকৃতি একটু দুর্বল হয়, আর চলেও গুড়ি মেরে মেরে। প্রায়ই জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায় আমার অভিজ্ঞতা মতে। এর ঠোট ও চোখের মাঝের যায়গা সাধারনত কালচে হয়। সারাদেশে অনেক যায়গায় আমি এর ছবি তুলেছি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে সহজে দেখা মেলে ধানি তুলিকা, ঢাকা পাখিটির ডাক শুনুন তামাটে তুলিকা Tawny Pipit Anthus campestris আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী বাংলাদেশে একে খুব বেশিবার পাওয়া গেছে বলে মনে হয়না। বেশিরভাগ সিনিয়র বার্ডারদেরও এই পাখিটি দেখার সুযোগ হয়নি আমার জানামতে। বলাই বাহুল্য আমিও এর দেখা পাইনি এখনো। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি লম্বা-ঠোট তুলিকা Long-billed Pipit Anthus similis আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী শক্ত ও লম্বা ঠোট বিশিষ্ঠ এই তুলিকা পাখিটিও পরিযায়ী। দেশে বহু আগে পাওয়া গেছিলো, এরপরে ২০২২ সিজনে রাজশাহীর প্রেমতলীতে পদ্মার চরে পাওয়া যায় এবং দেশের অনেকেই এর ছবি তুলতে সক্ষম হন। আমিও এর খোঁজে একদিন গেছিলাম কিন্তু দেখা পাইনি। এর ছবি এখনো তাই আমার সংগ্রহে নেই। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে খুব কম দেখা মেলে এখনো দেখা পাইনি ব্লাইদের তুলিকা Blyth’s Pipit Anthus godlewskii আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী আগে বিরল ভাবা এই ব্লাইদের তুলিকা আসলে বেশ সুলভ। দেশের প্রায় সর্বত্রই খোলা প্রান্তরে এই পরিযায়ী পাখিটিকে দেখা যায়। রিচার্ডের তুলিকা ভাবা হত আগে, পরে দেখা গেল আলাদা প্রজাতি। এরও আকার একটু বড়, ঠোট ও চোখের মাঝে সাদাটে, পিঠজুড়ে দাগ ভর্তি আর ডাক রিচার্ডের তুলিকার চাইতে একটু বেশী তীক্ষ্ণ। ঢাকার কেরানীগঞ্জে একে প্রথমে পেয়েছিলাম, এরপরে অনেক যায়গায়ই নিয়মিত এর দেখা পাচ্ছি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে ব্লাইদের তুলিকা, ঢাকা পাখিটির ডাক শুনুন গোলাপী তুলিকা Rosy Pipit Anthus roseatus আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী আমার অভিজ্ঞতায় একে একটু ভেজা বিল ও হাওড় এলাকায় বেশী পাওয়া যায়। প্রজনন ঋতুতে গলা ও বুকের কাছটা গোলাপী রঙ ধারন করে তাই এর এমন নাম। আর পিঠের দিকটা সবুজাভ ও দাগে ভর্তি। আমি এর ছবি প্রথমে তুলি মুন্সিগঞ্জের এক বিলে, পরবর্তীতে মানিকগঞ্জে ও শেরপুরে এর ছবি পেয়েছি। বিশ্বে ন্যুনতম বিপদগ্রস্থ এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে গোলাপী তুলিকা, মুন্সিগঞ্জ গাছ তুলিকা Tree Pipit Anthus trivialis আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী অন্য মাঠের পিপিটদের মতই এই খোলা প্রান্তরে চরে তবে সেখানে ছোট গাছপালা থাকা চাই কারন এই তুলিকাটি একটু পরপর সেসব গাছে যেয়ে বসতে পছন্দ করে। আমার অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে। এর কোমরের নিচের দিকে অত্যন্ত ক্ষীন ছিটে দাগ রয়েছে। অনেকেই ভাবে এ বুঝি জলপাইপিঠ তুলিকার কাছাকাছি দেখতে, আমার কাছে

বাংলাদেশের খঞ্জনা ও তুলিকা Read More »