গাংচিল, পানচিল ও গাংচষা মিলিয়ে আমাদের দেশে মোট ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে
কালো-পা কিটিওয়েক
Black-legged Kittiwake
Rissa tridactyla
আমাদের দেশের শীতের অনিয়মিত পরিযায়ী
কয়েক বছর আগে পাখিটিকে বাংলাদেশের উপকূলে প্রথম দেখা গেছিলো এবং তালিকাভুক্ত হয়। গত কয়েক মৌসুমে একটি করে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখিকে দেখা গেছে কক্সবাজারের সাগর উপকূলে। তারমানে হয়তো নিয়মিত আসে অল্প সংখ্যায় হলেও। এরা মূলত গাংচিল প্রজাতির পাখি, প্রাপ্তবয়স্ক হলে সারাদেহ সাদা রঙ ধারন করে, ঠোট হয়ে যায় সবুজ আর পা দুটো গাড় কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানার প্রান্ত কালো রঙ এর হয়। আকারে গাংচিলের চেয়ে সামান্য ছোট। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে সংকটাপন্ন
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
সরু-ঠোট গাংচিল
Slender-billed Gull
Chroicocephalus genei
আমাদের দেশের শীতের বিরল পরিযায়ী
বাংলাদেশে পাওয়া যাওয়া গাংচিলদের মধ্যে এটি সবচেয়ে বিরল। আকারে ধুসর-মাথা গাংচিলের মতই, তবে শীতে কানের কাছের কালো ছোপ থাকেনা আর ঠোট সরু ও লম্বা হয়ে থাকে। চট্বগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর এবং কালেভদ্রে রাজশাহীর পদ্মায় দেখা মেলে। সংখ্যায় বেশী থাকেনা। আমি এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
কালো-মাথা গাংচিল
Black-headed Gull
Chroicocephalus ridibundus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
প্রজননকালে এদের মাথা কালো রঙ ধারন করে তাই এদের এমন নাম। আমাদের দেশে নদী ও হাওড় এলাকায় বেশী পাওয়া যায়, সাগর উপকূলীয় এলাকায় কম। এদের সহজে চেনার উপায় হল ওড়ার সময় ডানার উপরিভাবে প্রান্ত ধরে সাদা পালক থাকে। মিশ্র ঝাঁকে থাকা অবস্থায় বসে থাকলে সহজে আলাদা করা যায়না। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ফরীদপুরের পদ্মা নদী থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
ধুসর-মাথা গাংচিল
Brown-headed Gull
Chroicocephalus brunnicephalus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের আরেকটি সুলভ গাংচিল হচ্ছে এটি। সাগর উপকূলীয় এলাকায় বেশী পাওয়া যায় এছাড়া দেশের ভেতরে নদী ও হাওড় এলাকায়ও কালো-মাথা গাংচিলের সাথে মিশে থাকে। প্রজননকালে এদের মাথা ধুসর-কালচে রঙ ধারন করে। এর প্রথম ছবি তুলেছিলাম টেকনাফ থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পালাসি গাংচিল
Pallas's Gull
chthyaetus ichthyaetusi
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আকারের গাংচিল। এদের আরেক নাম গাং কইতর। দেশের উপকূলীয় এলাকায় ও বড় নদী ধরে শীতকালে এদেরকে সহজেই চোখে পড়ে। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে এদের মাথা গাড় কালো রঙ ধারন করে তখন দেখতে বেশ লাগে, তবে এই পর্যায়ে যেতে এদের কয়েক বছর লেগে যায়। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম রাজশাহীর পদ্মা নদী থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
ছোট কালো-পিঠ গাংচিল
Lesser Black-backed Gull
Larus fuscus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
আকারে পালাসী গাংচিলের চেয়ে সামান্য ছোট এই পাখিটি, প্রাপ্তবয়স্ক হলে পিঠের উপরিভাগ ছাইরঙা কালচে রঙ ধারন করে, আর হলুদ ঠোটের আগায় নিচের অংশে লালচে একটা ছোপ দেখা যায়। এদের মধ্যে দুটো প্রধান উপ-প্রজাতি রয়েছে যা ভবিষ্যতে আলাদা প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোট গাড় কালো হয়। এর দেখা প্রথম পেয়েছিলাম রাজশাহীর পদ্মা থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
সুতি পানচিল
Sooty Tern
Onychoprion fuscatus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
গভীর সাগরের পানচিল, সাধারনত উপকূলের দিকে পাওয়া যায়না। ডানা ও দেহের গঠন বেশ সরু, প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ কালচে রঙ এর। ঘুর্নিঝড় আম্ফানের সময় বেশ কিছু পাখি পদ্মা নদী ধরে দেশের ভেতরে চলে আসে এবং কতিপয় বার্ডারের চোখে পড়ে। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
ব্রিডলেড পানচিল
Bridled Tern
Onychoprion anaethetus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায় এই পানচিলটিকে। করোনাকালীন সময়ে ঘুর্নিঝড় আম্ফানের তোড়ে দেশের ভেতরে চলে এসেছিলো এবং বার্ডারদের চোখে পড়ে দেশের তালিকায় যোগ হয়। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
ছোট পানচিল
Little Tern
Sternula albifrons
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
আকারে খুব ছোট এই পানচিল। বাংলাদেশে প্রজনন করে থাকে, নদীর চরে বালুর ওপরে বাসা করে। ঠোট সরু ও বেশ লম্বা, অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় কালো ঠোট থাকে আর প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে হলুদ ঠোটের আগায় কালো ছোপ থাকে। এর প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ভোলার উপকূলে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
মোটা-ঠোট পানচিল
Gull-billed Tern
Gelochelidon nilotica
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
খুব সুন্দর দেখতে এই পানচিল, হালকা বাদামী সাদা এর গায়ের রঙ, খাটো ও মোটা কালো ঠোটবিশিষ্ট এই পানচিল আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী। এর সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো হাতিয়ার দোমার চর থেকে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
ক্যাস্পিয়ান পানচিল
Caspian Tern
Hydroprogne caspia
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আকারের পানচিল এটি। আকারে প্রায় পালাসি গাংচিলের সমান হয়ে থাকে, একটু খাটো। এদের ঠোট টকটকে লাল রঙ এর হয়। প্রথম দেখা পেয়েছিলাম ভোলার দক্ষীণে সাগর উপকূলে। এই অঞ্চলেই সাধারনত পাওয়া যায়, গত মৌসুমে ঢাকার অদূরে মেঘনার চরেও একটি পাওয়া গেছিলো।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
সাদা-ডানা পানচিল
White-winged Tern
Chlidonias leucopterus
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
আমাদের দেশের বেশ দুর্লভ একটি পানচিল এটি। শীতকালে উড়ন্ত অবস্থায় ছাড়া এদের আলাদা করা কঠিন, তবে প্রাপ্তবয়স্ক পাখি প্রজননকালীন রূপ পেলে দেহের উপরিভাগ ও নিচের অংশ কালো এবং ডানার প্রান্ত সাদা পালক স্পষ্ট দেখা যায়। অল্প সংখ্যায় বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর উপকূলে এদের দেখা মেলে। এছাড়া রাজশাহীতেও পাওয়া যায় কদাচিৎ। আমি এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
জুলফি পানচিল
Whiskered Tern
Chlidonias hybrida
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুলভ পানচিল এটি। সারাদেশেই বড় জলাশয়ের আশেপাশে এদেরকে দেখা যেতে পারে। প্রজননকালীন সময়ে এদের ঠোট লালচে ও পেট কালো রঙ ধারন করে। এদের প্রথম দেখেছিলাম ঢাকার কেরানীগঞ্জে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে সহজে দেখা মেলে
পাতি পানচিল
Common Tern
Sterna hirundo
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বাংলাদেশে বড় নদীর উজানে ও প্রধানত দক্ষীনের উপকূলঘেষে বেশ সহজেই এই পানচিলকে দেখা যায়। অল্প সংখ্যায় এদেশে প্রজননও করে থাকে। এই পাখিটির সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো কক্সবাজারে।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
কালো-পেট পানচিল
Black-bellied Tern
Sterna acuticauda
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশের অত্যন্ত বিরল একটি আবাসিক পানচিল হচ্ছে এটি। বাংলাদেশের বেশ কিছু বড় নদীর চরে এরা ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটাতো তবে দ্রুত এদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে এদের সংখ্যা কমে আসছে। প্রজননকালীন রূপ বেশ সুন্দর, তখন এদের পেটের কাছটা গাড় কালো এবং ঠোট হলুদ রঙ ধারন করে, মাথার উপরে কালো টুপি থাকে। এখনো এই পাখিটির দেখা পাইনি।
বিশ্বে বিপন্ন
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
নদীয়া পানচিল
River Tern
Sterna aurantia
আমাদের দেশের আবাসিক পাখি
বাংলাদেশে এই পানচিলটিও ডিম পেড়ে বাচ্চা তুলে থাকে তবে দ্রুত এদের সংখ্যা কমে আসছে। নদীর চরে বালুর উপরে খোলামেলা যায়গায় ডিম পাড়ে, যা কুকুর, গবাদিপশু এবং মানুষের চলাচলের কারনে অনিরাপদ হয়ে পড়ে এবং প্রায়শই বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করতে পারেনা। এরকম চললে এই পানচিল আর কালো-পেট পানচিল দ্রুতই বিরলের খাতায় নাম লেখাবে। এটির দেখাও পাইনি এখনো।
বিশ্বে সংকটাপন্ন
এদেশে মাঝেমাঝে দেখা মেলে
বড় ঝুটি-পানচিল
Great Crested Tern
Thalasseus bergii
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
বেশ বড় আকারের এই পানচিলকে বাংলাদেশের উপকূলজুড়ে পাওয়া যায়, মাথার উপরিভাগে ঝুটির মত কিছু এলোমেলো পালক রয়েছে, আর ঠোট শক্ত মোটা ও হলুদ রঙ এর। আকারে বড় হওয়ায় সহজেই ছোট ঝুটী পানচিলের থেকে একে আলাদা করা যায়। প্রায়ই একসাথে মিশে ঝাঁক বেঁধে থাকে। এখনো এর দেখা পাইনি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
স্যান্ডউইচ পানচিল
Sandwich Tern
Thalasseus sandvicensis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
নামটা হাস্যকর হলেও এই পানচিলটি ইউরোপের যে অঞ্চলে ডিম পাড়ে সেখানের একটি দ্বীপের নাম অনুসারে এর এমন নাম হয়েছে। বাংলাদেশে বেশ কয়েক দশক ধরে এই পানচিলটির পাওয়া যাবার খবর নেই।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে খুব কম দেখা মেলে
ছোট ঝুটি-পানচিল
Lesser Crested Tern
Thalasseus bengalensis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
এই পাখিটিকেও আমাদের দেশের দক্ষিণে সাগর উপকূলজুড়ে পাওয়া যায়। আকারে বেশ ছোট এবং মাথার পেছন দিকে ঝুঁটির মত কিছু এলোমেলো কালো পালক রয়েছে, মাথার উপরিইভাগ সাদা হয়, ঠোট হলুদ। এখনো এই পাখিটির দেখা পাইনি।
বিশ্বে নূন্যতম বিপদগ্রস্থ
এদেশে কমই দেখা মেলে
দেশী গাংচষা
Indian Skimmer
Rynchops albicollis
আমাদের দেশের শীতের পরিযায়ী
আমাদের দেশের বেশ দুর্লভ একটি পাখি এই দেশী গাংচষা। দেখতে খুবই সুন্দর এবং আলাদা। ডানা গুলো সরু এবং বেশ লম্বা লম্বা, উপরিভাগ কালচে, ঠোট গাড় লাল এবং নিচের ঠোট উপরেরটির চেয়ে সামান্য লম্বায় বেশী। পানির উপর দিয়ে উড়ে উড়ে যায় এবং ঠোট পানিতে ডুবিয়ে দেয় এবং উপরিভাগ থেকে বিভিন্ন খাবার সংগ্রহ করে। দেখতে মনেহয় পানি চষে বেড়াচ্ছে তাই এদের এমন বাংলা নাম। এই পাখিটির সংখ্যা বিশ্বে খুব দ্রুত কমছে কারন এদের নিরাপদে প্রজনন করার মত স্থানের সংখ্যা কমছে। বাংলাদেশে সাধারনত শীতকালে ভোলা ও হাতিয়া দ্বীপের দিকে এদের একটি বড় ঝাঁক এসে শীতকাল কাঁটায়, এছাড়া অল্প কয়েকটি পাখিকে দেশের ভেতরে পদ্মা নদীতে কালে ভদ্রে দেখা মেলে, তবে তা সাধারনত পরিযায়নের পথেই সম্ভবত। রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জের বাইরে সম্প্রতি ঢাকার পাশে পদ্মা নদীতেও কয়েকটি পাখিকে দেখা গিয়েছিলো। আমি প্রথম এদের দেখা পাই ও ছবি তুলি নোয়াখালীর উপকূল থেকে।